প্রথম নারী মার্কিন অর্থমন্ত্রী হতে চলেছেন জ্যানেট, কে তিনি?
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক চেয়ারম্যান জ্যানেট ইয়েলেনকে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর জ্যানেট ইয়েলেন যদি এ দায়িত্ব পান, তবে তিনিই হবেন মার্কিন ইতিহাসের প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী।
৭৪ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের শীর্ষ অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালের আর্থিক সংকটের পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করার এবং মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য তাঁকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জ্যানেট ইয়েলেন কর্মীদের ওপর ব্যাংক নীতিমালার প্রভাব এবং মার্কিন অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান ব্যয়বৈষম্য নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন। তবে ওয়াশিংটনের ঐতিহ্য ধরে রাখতে জ্যানেট ইয়েলেনকে দ্বিতীয় মেয়াদে ফেডের দায়িত্ব দেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আসলে মার্কিন অর্থমন্ত্রী হিসেবে জ্যানেট ইয়েলেনকে পছন্দ করার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, অর্থমন্ত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে বাইডেনের কাছে সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছেন জ্যানেট। কারণ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন অর্থমন্ত্রীকে এখন অর্থনীতিকে মহামারি থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে স্থিতিশীল ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ইয়েলেন নবাগত নন।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান হিসেবে, জ্যানেট ইয়েলেন ইতিমধ্যেই নিজেকে যুক্তিযুক্তভাবে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরাও তাঁকে উষ্ণ স্বাগত জানাবেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ফেডের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে, ইয়েলেন জলবায়ু পরিবর্তন এবং মার্কিন অর্থনীতিকে এই করোনা মহামারির প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করছেন।
কে এই জ্যানেট ইয়েলেন
একই সঙ্গে চিকিৎসক ও শিক্ষক পরিবারের মেয়ে জ্যানেট ইয়েলেনের নিজের পরিবারটা গড়ে উঠেছে একেবারে অর্থনীতি নিয়ে। ইয়েলেনের বেড়ে ওঠা নিউইয়র্কে শহরে। ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি নেন। পিএইচডি করেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। জ্যানেট ইয়েলেন স্বামী নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জর্জ আকেরলফ। দুজনের পরিচয়টাও এই অর্থনীতি নিয়েই। জ্যানেট ইয়েলেন ১৯৭৭ সালে প্রথম চাকরি শুরু করেন ফেডারেল রিজার্ভে। সেখানকার আরেক কর্মী জর্জের আকেরলফের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। দুজনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক বছরের মধ্যে বিয়ে করেন তাঁরা। পরে দুজনই এক সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। এই দম্পতির এক ছেলে রয়েছে। তিনিও অর্থনীতির অধ্যাপক।
মার্কিন রাজনীতিতে যেভাবে এলেন জ্যানেট
জ্যানেট ইয়েলেনের ওয়াশিংটনের জন্য কাজ করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এক সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের উপদেষ্টাও ছিলেন। ফেড চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ভাইস চেয়ারপারসনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পরে বেন বারনানকের স্থলাভিষিক্ত হয়ে নতুন ইতিহাস গড়েন জ্যানেট ইয়েলেন। প্রথম নারী হিসেবে এই দায়িত্ব পাওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শুরু হয় তাঁকে নিয়ে তুমুল প্রশংসা। জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ বিশ্বের অর্থ বাজারের প্রভাবশালী নারী হিসেবে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, আইএমএফের চেয়ারম্যান ক্রিস্টিন লাগার্দের পাশেই রাখে তাঁকে।
নতুন এই দায়িত্ব যদি ইয়েলেন পান, তবে এটি হবে তাঁর জীবনের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মন্দার কবলে যুক্তরাষ্ট্র। করোনা প্রতিরোধের পাশাপাশি অর্থনীতির হাল ধরে রাখাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দেশটিতে এখন ১ কোটিরও বেশি মানুষ বেকার হয়ে রয়েছে। এর আগে ইয়েলের মূল্যস্ফীতির চেয়ে কর্মসংস্থানের দিকে মনোনিবেশ করা নীতি তাঁকে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়ানোর জন্য মূল্যস্ফীতি বাড়লেও জ্যানেট লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান বাড়ানো। বর্তমানে সুদের হারের শূন্যের সঙ্গে সঙ্গে ফেডের কাছে অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে এবং বৈষম্য মোকাবিলায় সীমাবদ্ধ শক্তি রয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে হয়তো তা করতে পারবেন ইয়েলেন।
অবশ্য ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারপারসন পদের জন্য সাবেক ট্রেজারি সেক্রেটারি ল্যারি সামার্সের নাম সুপারিশ করেছিলেন, কিন্তু প্রতিপক্ষের সমালোচনার মুখে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন সামার্স। তারপর আসে জ্যানেট ইয়েলেনের সুযোগ। তবে এবার ডেমোক্র্যাটের প্রগতিশীল এবং কেন্দ্রিক দুই ধরনের সদস্যদেরই পছন্দ ইয়েলেন। সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন জ্যানেট ইয়েলেন সম্পর্কে বলেন, ‘জেনেট ইয়েলেন অর্থমন্ত্রী হিসেবে সঠিক পছন্দ। তিনি স্মার্ট, শক্ত এবং নীতিমান।’