নেতৃত্ব নিয়ে ঘোলা জলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা
গত জুলাইয়েই পদত্যাগ করার কথা জানান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো।
আজ সোমবার থেকে তিনি আর এই দায়িত্বে থাকছেন না।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পরবর্তী মহাপরিচালক নিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহারের জন্যই বিষয়টি দীর্ঘায়িত হবে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পরবর্তী মহাপরিচালক নিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহারের জন্যই বিষয়টি দীর্ঘায়িত হবে।
এমন একজনকেই নিয়োগ দিতে হবে, যিনি ভবিষ্যতে স্থগিত বাণিজ্য আলোচনাগুলো চালিয়ে যেতে পারেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য–উত্তেজনা রোধে তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। অবশ্যই তাঁকে করোনো মহামারির কারণে দেখা দেওয়া অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে সদস্যদেশগুলোকে সহায়তা করতে হবে।
অনেক দিন ধরেই ডব্লিউটিওর ওপর নাখোশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৮ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে নিজেদের নীতি পরিবর্তন না করলে সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অনেক পর্যবেক্ষক আশঙ্কা করেছেন, ডব্লিউটিওর নতুন মহাপরিচালককে মনোনীত করার প্রক্রিয়াকে পঙ্গু করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সংস্থাটি হয়তো দীর্ঘ সময়ের জন্য নেতৃত্বহীন থাকবে।
গত জুলাইয়েই পদত্যাগ করার কথা জানান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো। আজ সোমবার থেকে তিনি আর এই দায়িত্বে থাকছেন না। যেহেতু সময়ের আগেই আজেভাদো পদত্যাগ করলেন, তাই এতে বেশ সংকটের পড়তে যাচ্ছে ডব্লিউটিও। কারণ অনেক জল্পনাকল্পনা চললেও কে হতে যাচ্ছেন পরবর্তী মহাপরিচালক, তা এখনো ঠিক হয়নি। এই পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে বিশ্লেষকেরা যা বলছেন
বার্নের ওয়ার্ল্ড ট্রেড ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ম্যানফ্রেড এলসিগ বার্তা সংস্থা এএফপি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া হলো নতুন মহাপরিচালক মার্কিন উদ্বেগকে ভাগ করে নেবেন। এর মধ্যে অনেকগুলো চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা মহাপরিচালক নিয়োগের বিষয়টি জটিল করে তুলছে।
৬২ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান কূটনীতিক আজেভেদো ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর পরে আবার দায়িত্ব পান। ২০২১ সালে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। চলে যাওয়ার কারণটা ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করেন আজেভেদো। তবে তিনি এ-ও বলেন, করোনা-পরবর্তী নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য সংগঠনের আলাদা নেতা থাকা ভালো।
ডব্লিউটিও এর মধ্যে আটজন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে তিনজন আফ্রিকার, দুজন ইউরোপীয়, দুজন এশীয় এবং একজন লাতিন আমেরিকান। তবে তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
অধ্যাপক এলসিগ বলেন, অনেক ডব্লিউটিও সদস্য প্রশাসনের পরিবর্তনের আশায় রয়েছে। তবে তাঁরা মার্কিন নির্বাচনের পর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। সব মিলিয়ে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ পেতে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি, বাছাইয়ের ক্রমবর্ধমান রাজনীতি এই অস্থায়ী সময়সীমা আরও বাড়িয়ে ফেলতে পারে।
গত মাসে সদস্যদেশগুলো চারজন উপপরিচালকের মধ্যে থেকে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বাছাই করতে ব্যর্থ হয়। অথচ বরাবরই এটা একটি সরল প্রক্রিয়া ছিল। জার্মানির কার্ল ব্রুনার না মার্কিন অ্যালান ওল্ফ—কাকে এই দায়িত্ব দেওয়া উচিত, তা নিয়ে ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটন ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি করে। পর্যবেক্ষকেরা বলেন, ওই ঘটনা ছিল প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের নজিরবিহীন রাজনৈতিকীকরণ।
জ্যাক ডিলারস ইনস্টিটিউটের গবেষক এলভায়ার ফ্যাব্রি মনে করেন, ওয়াশিংটন অন্তর্বর্তীকালীন পূর্বাভাসের চেয়ে দীর্ঘ করতে চায়। কোনো ইউরোপিয়ানকে এই অবস্থানে বসাতে চায় না তারা।
ফরাসি গবেষণাকেন্দ্র সেপেইয়ের প্রধান সেবাস্তিয়ান জিন বলেন, মার্কিনরা এই প্রক্রিয়াটিতে যে ক্ষতিকারক শক্তি প্রয়োগ করছে, তা পরিমাপ করা কঠিন। তারা কতটুকু শক্তি প্রয়োগ করবে, তা নির্ণয় করা কঠিন। অনেকে মনে করছেন, এই পরিচালক নিয়োগ মার্কিন নির্বাচনের আগে হবে না। আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রশাসন আসার পর হয়তো নতুন আলোচনা হবে।
নতুন মনোনয়ন
সারা বিশ্বে ব্যবসায়িক নীতি প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই সংস্থাটির নীতির সমালোচনা করে আসছিলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে জোরে জোরে অভিযোগ আনেন তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে। ট্রাম্পের এসব অভিযোগের মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যনীতি আর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মুক্তবাজার নীতির মধ্যকার আদর্শিক দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়। ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত এর তিনজন মহাপরিচালক ইউরোপের ছিলেন। এ ছাড়া ওশেনিয়া, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে একজন করে মহাপরিচালক হয়েছেন।
গত জুলাইতে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই পদে মনোনয়ন পাওয়া সাতজনের পরিচয় উল্লেখ করা হয়। তাঁরা হলেন যুক্তরাজ্যের প্রথম ব্রেক্সিট-পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স, কেনিয়ার আইনজীবী, কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ আমিনা মোহামেদ, দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ইউ মায়ুং-হি।
আরও আছেন মেক্সিকোর অর্থনীতিবিদ যিশু সিড কুড়ি, নাইজেরিয়ার সাবেক পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী এনগোজি ওকনজো-আইওয়ালা, মিসরের সাবেক কূটনীতিক হামিদ মামদৌহ, পূর্ব ইউরোপের দেশ মলদোভার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিউডর উলিয়ানভস্কি।