ধনকুবেরদের হারানোর বছর
>• যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব সব দেশেই কমবেশি পড়েছে
• বছরের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও ধস নামে
• তাতে ধনীদের সম্পদমূল্য কমেছে
বিদায় নিতে চলেছে আরেকটি বছর। ২০১৮ সাল বিদায়ের একেবারে শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। বিদায় নিতে যাওয়া এ বছরটির শুরুটা অর্থনীতির জন্য বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একের পর এক ঘটনা ঘটতে শুরু করে। তাতে বদলে যায় বিশ্বের অর্থনীতির চেহারা। শেয়ারবাজারেও অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে বছর শেষে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা ৫১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের সম্পদ খুইয়েছেন। সেই হিসাবে বলা চলে, ২০১৮ সালটি শেষপর্যন্ত ধনীদের জন্য ভালো বছর ছিল না।
মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্স বা শতকোটি ডলারের মালিকদের তালিকায় থাকা শীর্ষ ৫০০ জন ধনকুবেরের সম্পদমূল্য এ বছর ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার কমেছে। এ হিসাব ২১ ডিসেম্বরের। ধনকুবেরদের সম্পদ এভাবে কমে যাওয়ার প্রধান কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ, যার প্রভাব সব দেশেই কমবেশি পড়েছে। পাশাপাশি বছরের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও ধস নামে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক কেন্দ্র ওয়াল স্ট্রিটের জন্য ২০০৮ সালের মন্দার সময়ের পর চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহটা ছিল সবচেয়ে বাজে।
সব মিলিয়ে শীর্ষ ধনীদের জন্য বিদায়ী বছরটি ২০১২ সালের পর সবচেয়ে খারাপ গেল। বছরের শুরুর সঙ্গে শেষের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, পার্থক্য খুবই বড়। আর এ নিয়ে ব্লুমবার্গসহ কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন ট্রাস্ট ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা কেটি নিক্সন বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তবে আমি মনে করি না, এই উদ্বেগ মন্দা ডেকে আনবে। কিন্তু বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
টালমাটাল পরিস্থিতির হাত থেকে রেহাই পাননি শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসও। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রতিষ্ঠাতার সম্পদমূল্য সেপ্টেম্বরে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। কিন্তু বছর শেষে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার হারিয়ে গেছে। এখন তাঁর সম্পদমূল্য ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
তবে এ বছরটা সবচেয়ে খারাপ গেছে ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গের। জানুয়ারি মাস থেকেই তাঁর শনির দশা শুরু হয়। একের পর এক সংকটে জর্জরিত হয়ে এ বছর তিনি ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার খুইয়েছেন। ব্লুমবার্গের তালিকায় থাকা ১৭৩ জন মার্কিন ধনকুবেরের আয় এ বছর ৫ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।
মেক্সিকোর ধনকুবের কার্লোস স্লিমেরও এ বছর বড় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এক সময় বিশ্বের শীর্ষ ধনী স্লিম এখন ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে তালিকার ছয় নম্বরে আছেন। তবে লাতিন আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন থ্রি-জি মোবাইলের সহপ্রতিষ্ঠাতা জর্জ পাউলো লেম্যান। তাঁর সম্পদ কমেছে ৯৮০ কোটি ডলারের। তবে এত কিছুর পরও তিনি ব্রাজিলের শীর্ষ ধনী।
তুলনামূলকভাবে রুশ তথা রাশিয়ান ধনীদের অবস্থা ভালো ছিল ২০১৮ সালে। তেলের বাজারে টালমাটাল অবস্থা এবং ইউক্রেনের সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও দেশটির শীর্ষ ২৫ ধনীর সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের সম্পদ কমেছে খুব সামান্যই।
ব্লুমবার্গের তালিকায় রাশিয়ার শীর্ষ ২৫ ধনীর মধ্যে ১৬ জনের সম্পদমূল্য কমেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা অ্যালুমিনিয়াম খাতের শীর্ষ ধনীদের অন্যতম ওলেগ দেরিপাস্কার সম্পদমূল্য কমেছে ৫৭০ কোটি ডলারের। ফলে তিনি ব্লুমবার্গের শীর্ষ ৫০০ ধনীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
এর বিপরীতে রাশিয়ার জ্বালানি খাতের শীর্ষ ধনী লিওনিড মিখেলসন, গেনাডি টিমশেঙ্কো ও ভেজিট আলেকপেরভের সম্পদমূল্য বেড়েছে ৯০০ কোটি ডলার। গ্যাস কোম্পানি নোভাটেকের শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে টিমশেঙ্কোর সম্পদমূল্য বেড়েছে ২৭ শতাংশ। এ কারণে জ্বালানি খাতের ধনীদের জন্য বছরটা ভালো গেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও এশিয়ায় ধনীদের উত্থান অব্যাহত আছে।
ধনীদের সম্পদ
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্স বা শতকোটি ডলারের মালিকদের তালিকায় শীর্ষ ৫০০ ব্যক্তি এ বছর ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার খুইয়েছেন। ২০১২ সালের পর এটিই তাঁদের সবচেয়ে খারাপ বছর গেল।
জেফ বেজোস
আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা বেজোস হারিয়েছেন ৫,৩০০ কোটি ডলার। সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১১,৫০০ কোটি ডলার।
মার্ক জাকারবার্গ
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ একের পর এক সংকটে জর্জরিত হয়ে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার খুইয়েছেন।
কার্লোস স্লিম
কার্লোস স্লিম একসময় বিশ্বের শীর্ষ ধনী ছিলেন। এখন তিনি ছয় নম্বরে নেমে গেছেন।
পাউলো লেম্যান
আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে থ্রি-জি মোবাইলের এ সহপ্রতিষ্ঠাতার। সম্পদ কমেছে ৯৮০ কোটি ডলার।
ওলেগ দেরিপাস্কা
অ্যালুমিনিয়াম খাতের শীর্ষ ধনীদের অন্যতম ওলেগ দেরিপাস্কার সম্পদমূল্য কমেছে ৫৭০ কোটি ডলারের।
গেনাডি টিমশেঙ্কো
গ্যাস কোম্পানি নোভাটেকের শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ায় রুশ ধনকুবের টিমশেঙ্কোর সম্পদমূল্য বেড়েছে ২৭ শতাংশ।