কত দূর কমতে পারে সোনার দাম
গত মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৬ সালের নভেম্বরের পর এই প্রথম এক মাসে এত কমেছে সোনার দাম। বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্বর্ণের বাজারে অনিশ্চয়তা কমছে। এ পর্যায়ে এখন প্রশ্ন এসেই যায় স্বর্ণের দাম কি আরও কমবে?
সোনার দাম নিয়ে বিশ্লেষণ করে কিটকো ডট কম। তাদের তথ্য অনুসারে গত সপ্তাহে প্রতি আউন্সের দাম ১৮০০ ডলারের নিচে নেমে গেলেও ২০২১ সালে মূল্যবান এই ধাতুর দাম আবারও ২০০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আবার অনেক বিশ্লেষক বলছেন, আগামী দুই মাস কমের দিকে থাকবে স্বর্ণের দাম। স্বর্ণের চাহিদাও করোনা–পূর্ববর্তী অবস্থায় চলে যাবে। তবে এরপর আবার বাড়তে পারে দাম।
কী অবস্থায় যেতে পারে স্বর্ণের দাম
প্রথমেই আসি লেন্ডিং জায়ান্ট সিটির বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিবেদন কী বলছে। তারা বলছে, ডিসেম্বরে স্বর্ণের দাম আরও কমতে পারে। আউন্সপ্রতি কমে ১৭০০ ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে। যদিও পরের তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতি আউন্স আবার বেড়ে ২ হাজার ডলারে উঠে যেতে পারে। প্রযুক্তিগত বাজার বিশ্লেষকদের মতে, দাম আউন্সপ্রতি ১৭৭০ ডলারের পরেও কমতে পারে। একটা আশা করা যায় এই দাম ১৬৬০ ডলারে নেমে যেতে পারে। মূলত এই বছরের শেষে বা নতুন বছরের শুরুতে এই পরিস্থিতি হতে পারে।
আরেক দল বিশ্লেষক বলছেন, ২০২১ সালে দাম ঊর্ধ্বমুখী হবে। নভেম্বরে দাম কমে যাওয়াটি আসলে আরও বাড়ার ভিত্তি তৈরি করেছে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে শেয়ারবাজারে যে অস্থিরতা দেখা গেছে তেমনটা স্বর্ণের বাজারে দেখা যায় না। তবে ঋণ বেড়ে যাওয়া, কোয়ান্টেটিভ ইজিং নেওয়া হলে ও জিডিপির অনুপাতে ঋণ বাড়লে মূল্যবান এই ধাতু সংরক্ষণ করে রাখার মনোভাব বাড়তে পারে বিনিয়োগকারীদের। কোয়ান্টেটিভ ইজিং হলো এমন একটি বিশেষ মুদ্রানীতি, যা বিশেষ ব্যবস্থায় একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করতে পারে।
সোনার দাম কেন এত বেশি?
কয়েক বছর ধরে সুদহার কম থাকা, ডলারের দামের অস্থিরতার কারণে স্থানীয়ভাবে সোনার দাম ব্যাপক বেড়েছে। পরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। এ বছরে মহামারি ঘিরে আতঙ্ক বাকিটা উসকে দিয়েছে। দেশে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা বাড়তে থাকায় একটি আশ্রয় হিসেবে সোনাকে বেছে নেন। তবে আশঙ্কা এখন এক কোণে চলে গেছে। ফলে দাম আবার কমতে দেখা যাচ্ছে। তবে এখানে আরও কিছু জটিলতা আছে। কিছু প্রত্যাশিত অনিশ্চয়তার ওপর ভিত্তি করে সোনার দামের ওঠানামা চলতে পারে, এমন আশঙ্কা এখনো রয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঝুঁকির আশঙ্কা কিছুটা কমেছে। তবে বাজার মানসিকতার ওপর নির্ভরশীলতা, ভাইরাসের উত্থান, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বৈষম্য নতুন ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
এ বছরে স্বর্ণের দামের যে উত্থান-পতন
করোনা ছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সোনার বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার কারণেও সবাই সোনার মজুত বাড়িয়েছিল। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম, নতুন রেকর্ড হয়। গত ২৭ জুলাই প্রথম ৯ বছরের রেকর্ড ভাঙে দাম। বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (এক আউন্স সমান ২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) সোনার দাম বেড়ে হয় ১ হাজার ৯৪৪ ডলার। এর আগে ২০১১ সালে প্রতি আউন্স সোনার দাম উঠেছিল ১ হাজার ৯২১ ডলারে। অর্থাৎ সে সময়ের চেয়ে ২৪ ডলার বেড়ে দামের নতুন রেকর্ড গড়ে মূল্যবান এই ধাতু। ওই বৃদ্ধি নিয়ে বছরের ৭ মাস পর্যন্ত সোনার দাম বাড়ে ২৭ শতাংশ।
এরপরও বাড়তে থাকে দাম। আগস্টে একপর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭২ ডলার ৫০ সেন্ট পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর ৭ আগস্ট থেকে কিছুটা কমতে দেখা যায়। এভাবেই কমা-বাড়া চলতে থাকে। নভেম্বরে এসে বেশ কমতে শুরু করে দাম। গত ৩০ নভেম্বর এক দিনে দাম কমে ১ শতাংশ। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন ৯ মাস ধরে বিশ্বকে আটকে রাখা করোনা নামক ভাইরাসের একটি টিকা আসছে তা নিয়ে আশা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট আসছেন এবং করোনার সংকট কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে চীন।