আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম যে দুই ঝুঁকি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর খুব দ্রুত জরুরি প্রণোদনাব্যবস্থা কমিয়ে দেওয়া ও সরবরাহ শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অন্যতম প্রধান দুটি ঝুঁকি। কারণ, কোভিড-১৯ মহামারি এখনো অব্যাহত। রয়টার্সের এক বৈশ্বিক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় এর আগে অনেক পূর্বাভাসদাতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুরে বলেছিলেন, সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বিষয়টি ক্ষণস্থায়ী। এমনকি তাঁদের পূর্বাভাসে সামনে বাড়বে—এমনটা বলা হলেও তাঁরা এটা ক্ষণস্থায়ী বলে উল্লেখ করেছিলেন। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো অনেক দিন ধরে মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকলে ও জরুরি প্রণোদনানীতি চলতে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ধৈর্যহারা হতে পারে এবং মূল্যস্ফীতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর চাপ অনুভব করতে পারে, যেখানে মানুষ এখনই এর প্রভাব অনুভব করছে।
বিশ্বজুড়ে ৫০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের ওপর জরিপ চালিয়ে রয়টার্স এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ২৫টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৩টি আগামী বছরের শেষের আগে অন্তত একবার সুদের হার বাড়াবে। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই বাড়িয়েছেও, যেমন: নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া ও ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় এক–চতুর্থাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দীপনা খুব দ্রুত কমিয়ে দিলে বিশ্ব অর্থনীতি বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। করোনা মহামারিতে সরবরাহের শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়া ও করোনার প্রকোপ তৃতীয় বছরে প্রবেশ করবে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, করোনার প্রকোপ এখন কমেছে; তবে এখনো শেষ হয়ে যায়নি, তাই হুমকি থেকেই যাচ্ছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হবে, আগামী বছর তা কমে হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। এ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তার সমান হলেও আগামী বছর তাদের পূর্বাভাসের চেয়ে অর্থনীতি আরও বেশি শ্লথ হবে বলে মনে করছেন রয়টার্সের জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। আইএমএফের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী বছর ৪ দশমিক ৯ হবে। জরিপে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে এই প্রবৃদ্ধি আরও কমে হবে—সাড়ে ৩ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ২১ উন্নত অর্থনীতির মধ্যে ১৮টি মূল্যস্ফীতি আউটলুক বাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ২৭টি উদীয়মান অর্থনীতির মধ্যে ১৫টি মুদ্রাস্ফীতির দৃষ্টিভঙ্গি বাড়িয়েছে। তবে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির সাম্প্রতিক বৃদ্ধি আগামী তিন থেকে চার বছর ধরে অব্যাহত থাকবে।