আবারও বেড়েছে অতি উচ্চ ধনীদের সম্পদ

এক বছর কমার পর গত বছর বিশ্বে আবারও অতি উচ্চ ধনীদের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে তাঁদের সম্পদমূল্য। ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে এই অতি উচ্চ ধনী মানুষের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পাঁচ বছরের হিসাবে এ রকম ধনীর সংখ্যা বেড়েছে ২০ শতাংশ। আর ২০২৩ সালে তাঁদের সম্পদমূল্য বেড়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। ওই বছর তাঁদের সবার মোট সম্পদের মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন বা ৪৯ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার।

২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি থাকলেও অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বছরের শেষ ভাগে ইকুইটি শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি অতি উচ্চ ধনীদের জন্য পয়মন্ত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এই অতি ধনীদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে সে দেশে এই শ্রেণির ধনীর সংখ্যা ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটিতে এখন অতি উচ্চ ধনীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯৫০ জন। কিন্তু একই সময় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে অতি উচ্চ ধনীর সংখ্যা ১ শতাংশ কমেছে। এ নিয়ে টানা দুই বছর চীনে অতি উচ্চ ধনীর সংখ্যা কমল। এই হ্রাস অবশ্য অস্বাভাবিক নয়। কারণ, কয়েক বছর ধরেই চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমেছিল। সেই ধাক্কায় দেশটিতে অতি উচ্চ ধনীর সংখ্যা কমবে, সেটাই স্বাভাবিক। আবার জার্মানিতে অতি উচ্চ ধনীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

এদিকে চীনে অতি উচ্চ ধনীর সংখ্যা কমলেও এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন জাপান ও ভারতে অতি উচ্চ ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশ চাঙা। ভারত প্রসঙ্গে ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের যে ১০টি দেশে অতি উচ্চ ধনীর সংখ্যা বাড়বে, তার মধ্যে ভারত অন্যতম একটি। বিশেষ করে দেশটির বৃহৎ শহর বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ ও দিল্লিতে অতি উচ্চ ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশে পৌঁছাবে। সেই সঙ্গে এশিয়ার আরও দুটি শহর যথাক্রমে ফিলিপাইনের ম্যানিলা ও মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শীর্ষ ১০ শহরের কাতারে উঠে আসবে।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী অঞ্চল, অর্থাৎ উত্তর আমেরিকায় অতি ধনী মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে। ২০২৩ সালে এই অঞ্চলে অতি ধনী মানুষের সংখ্যা ১১ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৮০-তে উঠেছে। এর মানে, বিশ্বের ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ অতি ধনীর বসবাস এখন উত্তর আমেরিকায়। ইউরোপে অতি ধনীর সংখ্যা ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এশিয়া অঞ্চলে অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ শতাংশ। এতে এশিয়ায় অতি ধনীর সংখ্যা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৩০ জন। এশিয়া অঞ্চলে অতি ধনী বৃদ্ধির হার অবশ্য প্রাক্‌কোভিড পর্যায়ের চেয়ে কম। এর অন্য কারণ আছে। সেটা হলো, ২০১৯ সালের পর অতি ধনীদের বসবাসের জায়গা হিসেবে ইউরোপ দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল হিসেবে উঠে এসেছে।

এবার দেখে নেওয়া যাক, ২০২৩ সালে বিশ্বের কোন অঞ্চলে কতজন অতি উচ্চ ধনীর মানুষের বসবাস ছিল। গত বছর উত্তর আমেরিকায় মোট বৈশ্বিক অতি উচ্চ ধনীর ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ বাস করতেন। এই হার ইউরোপে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ, এশিয়া অঞ্চলে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, আফ্রিকায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১ দশমিক ৬ শতাংশ।

আলোচ্য বছরে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত অতি উচ্চ ধনীদের মোট সম্পদমূল্য ছিল এই শ্রেণির সবার মোট সম্পদমূল্যের ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ; ইউরোপের ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ; এশিয়ার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ; মধ্যপ্রাচ্যের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ; লাতিন আমেরিকার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ; আফ্রিকার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ; প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা পৃথিবীতেই এখন অর্থনীতিতে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। অনিশ্চয়তাও আছে। এর মধ্যেও আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট বলছে, পরবর্তী পাঁচ বছরও বিশ্বজুড়ে অতিধনীর সংখ্যা বাড়বে। আগামী পাঁচ বছরে এই শ্রেণির ধনী মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৬৫০ জনে উন্নীত হবে। এই শ্রেণির সম্পদমূল্য বাড়বে আরও ১৯ ট্রিলিয়ন বা ১৯ লাখ কোটি ডলার। যথারীতি উত্তর আমেরিকা এ ক্ষেত্রেও শীর্ষে থাকবে। তখন অতি উচ্চ ধনীদের মধ্যে ৩৯ শতাংশের বসবাস হবে এই অঞ্চলে।

এশিয়া অঞ্চলে আগামী পাঁচ বছরে অতিধনীর সংখ্যা বাড়বে, তবে বৃদ্ধির হার কিছুটা কমবে। এতে এই শ্রেণির বৈশ্বিক ধনীর মধ্যে এশিয়ার অনুপাত বেড়ে হবে ২৭ শতাংশ। তবে আগামী পাঁচ বছরে ইউরোপের হিস্যা কিছুটা কমে ২৫ শতাংশে নামবে, যা ২০১৯ সালে ছিল ২৮ শতাংশ।

এদিকে বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ অতিধনীর সঙ্গে নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদের ব্যবধান আরও বেড়েছে। গত এক দশকে এই ১ শতাংশ ধনী আরও ৪২ ট্রিলিয়ন বা ৪২ লাখ কোটি ডলার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তা নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদ আহরণের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

অক্সফামের প্রতিবেদনমতে, গত এক দশকে বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর প্রত্যেকের সম্পদ প্রায় ৪ লাখ ডলার করে বেড়েছে। একই সময়ে নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদ বেড়েছে গড়ে ৩৩৫ ডলার। অর্থাৎ গড়ে তাঁদের সম্পদ বেড়েছে দৈনিক ৯ সেন্ট করে।