সম্প্রতি বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দর প্রতি ব্যারেল ৯০ ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল। এরপর আবার তা ১০০ ডলারের কাছাকাছি উঠে যায়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন লেখার সময় অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দর প্রতি ব্যারেল আবার ৯১ দশমিক ৫৪ ডলারে নেমে আসে।
তেলের দর এভাবে ওঠানামার কারণে একধরনের অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার তেলের দর হ্রাসের ধারা থামাতে ওপেক প্লাস তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নিয়ে চলছে এখন চাপান-উতোর।
ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্তে খেপেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতির ফল ভুগতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, তাঁর মনে কী আছে, সে বিষয়ে তিনি এখনই খোলাসা আলোচনা করবেন না।
সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতির ফল ভুগতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
আর সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এক মাস পিছিয়ে দিতে চাপ দিচ্ছে। বিষয়টি হচ্ছে আগামী ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন। বাইডেন চান না, এই মুহূর্তে সে দেশে তেলের দর বৃদ্ধি পাক। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের কথা উল্লেখ না করলেও আদতে তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সৌদি আরবকে চাপ দিচ্ছে। খবর আল-জাজিরার
এদিকে ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত ‘পুরোপুরি অর্থনৈতিক’ বলে দাবি করেছে সৌদি আরব। তাদের ভাষ্য, ওপেক প্লাস ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়ের স্বার্থে কাজ করে। গতকাল সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ওপেক প্লাসের সদস্যদেশগুলো চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বিবেচনায় এবং বাজারের অস্থিরতা কমানোর লক্ষ্যে সদস্যদের সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে অনামা এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তেলের উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত ‘পুরোপুরি অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে’ নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সৌদি আরব মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ধারাবাহিক পরামর্শের মাধ্যমে এটি পরিষ্কার করেছে, সব ধরনের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত পরামর্শ অনুযায়ী এক মাসের জন্য স্থগিত করলে নেতিবাচক অর্থনৈতিক পরিণতি হতে পারে।
অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক), রাশিয়াসহ তাদের মিত্র তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মিলিত গোষ্ঠী ওপেক প্লাস। গোষ্ঠীটি যেন তেল উৎপাদন হ্রাস করার সিদ্ধান্ত না নেয়, তার জন্য মার্কিন কর্মকর্তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক তদবির করে আসছিলেন। কিন্তু তাঁদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিয়ে উৎপাদনের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে ওপেক প্লাস।
এই ঘটনায় খেপে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সৌদি আরব মস্কোর ‘আজ্ঞাবহ’ হয়ে কাজ করছে। ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দিয়ে তাদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে, এতে আপত্তি তুলেছিল সৌদি আরব।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, রাশিয়া যেমন সরবরাহ কমাচ্ছে, তেমনি অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার কারণে অনেক জায়গায় কমছে তেলের চাহিদা। ফলে বিশ্ববাজারে কমেছে তার দাম।
একসময় তা ৮৮ ডলারে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু তাতেও দাম কমার সুবিধা পাননি বিশ্ববাসী। কারণ, তড়িঘড়ি সেই দাম আবার বাড়ানোর জন্য রপ্তানিকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাস দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল সরবরাহ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব বাজারে এখনো পড়েনি।
তবে আশঙ্কার এখানেই শেষ নয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে তেলের দর আবারও বাড়বে কি না, সেই জল্পনা এখন বিশ্বজুড়ে। অপরিশোধিত তেলের দাম কমলে বাংলাদেশের মতো আমদানিকারীদের খরচ কমে, বাড়লে খরচ বাড়ে।