চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালুর চেষ্টায় জাপান, আগ্রহী নন অনেকেই

জাপান পতাকা

কিছু কিছু উন্নত দেশে সপ্তাহে চার দিন কাজের রীতি চালুর চেষ্টা চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার জাপানেও সপ্তাহে চার দিন কাজের রীতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জাপানিরা সাধারণত কঠোর পরিশ্রমী জাতি হিসেবে পরিচিত। আড্ডা দেওয়ার চেয়ে তারা কাজ করতেই বেশি ভালোবাসে। আবার এই কঠোর পরিশ্রমের কারণে সে দেশে কিছু মানুষের মৃত্যুও হয়। কঠোর পরিশ্রমে মৃত্যু হওয়া—এই বিষয়টি বোঝানোর জন্য জাপানি ভাষায় বিশেষ একটি শব্দও আছে। সেটা হলো ‘কারোশি’। জাপানে এই শব্দটি বহুল ব্যবহৃত।

জাপান টুডে খবরে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে প্রতিবছর জাপানে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাপান সরকার বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ব্যক্তি ও কোম্পানি—উভয় পক্ষকেই চার দিনের কর্মসপ্তাহ বাস্তবায়নে উৎসাহ দিতে নতুন প্রচারাভিযান শুরু করেছে দেশটির সরকার।

এই ধারণাটি অবশ্য একেবারে নতুন নয়। এর আগে জাপানের সংসদ সদস্যরা ২০২১ সালে সপ্তাহে চার দিন কাজের প্রস্তাব দেন। মূলত এর পর থেকে চার দিনের কর্মসপ্তাহের ধারণা মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করে।

জাপানের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন মাত্র ৮ শতাংশের মতো কোম্পানি কর্মীদের সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দেয়। অন্যদিকে আইন মেনে সপ্তাহে এক দিন ছুটি দেয় ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। এই বাস্তবতায় চার দিনের কর্মসপ্তাহ বাস্তবায়নে অর্থাৎ সপ্তাহে তিন ছুটি দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে ‘ওয়ার্ক স্টাইল রিফর্ম’ প্রচারণা হাতে নিয়েছে সরকার। এই প্রচারণা সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘আমরা এমন একটা সমাজ গড়তে চাই, যেখানে কাজের তালিকা হবে বিচিত্র। যাতে নাগরিকেরা বৈচিত্র্যময় তালিকা থেকে নিজেদের মতো করে কাজ বেছে নিতে পারেন।’

তবে এই প্রচারণায় খুব একটা কাজ হচ্ছে না। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি কোম্পানি কর্মদিবসে পরিবর্তন আনার বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছে।

জাপানের মানুষ যে সপ্তাহে তিন দিন ছুটির বিষয়ে খুব আগ্রহী, বিষয়টি তেমন নয়। সম্প্রতি প্যানাসনিক হোল্ডিংস কর্প নামের প্রতিষ্ঠান প্রায় ৬৩ হাজার কর্মীকে সপ্তাহে চার দিন কাজ করার সুযোগ দিলেও মাত্র ১৫০ জন কর্মী তা গ্রহণ করেছেন।

জাপান এমনিতেই বুড়োদের দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে জন্মহার কম; সে কারণে তরুণ বা কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কম। এটা বড় একটা সমস্যা।

জাপানের অনেক সরকারি কর্মকর্তা মনে করেন, কার্যকর কর্মশক্তি বজায় রাখার জন্য ছুটিবিষয়ক মানসিকতার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি তথ্যানুসারে, ২০৬৫ সালে জাপানে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ৪০ শতাংশ কমবে। এখন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৭ কোটি ৪০ লাখ; ২০৬৫ সালে সাড়ে ৪ কোটিতে নেমে আসবে।

যাঁরা সপ্তাহে তিন দিন ছুটির প্রস্তাব দিচ্ছেন, তাঁদের মূল বক্তব্য হলো এটা হলে মানুষ পরিবারের দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন। অর্থাৎ তাঁরা আরও সন্তান নিতে আগ্রহী হবেন। এ ছাড়া যাঁদের বাড়িতে বৃদ্ধ মা–বামা আছেন, তাঁরা তিন দিন ছুটি পেলে বৃদ্ধদের ভালোভাবে দেখাশোনা করতে পারবেন। সেই সঙ্গে তাঁরা কিছুটা স্বাধীনতাও পাবেন। নানা পথ খুঁজে নিতে পারবেন।

সম্প্রতি গ্যালাপের জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় জাপানের মানুষের কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কম। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা কাজের সঙ্গে একাত্মবোধ করেন, যদিও বৈশ্বিক পর্যায়ে এই হার ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ জাপানিরা অনেকটা নিরাবেগভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সেবাশিল্পে মানুষকে কাজ করতে আগ্রহী করতে হলে ধরাবাঁধা কাজের সময় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে নারীদের জন্য এটা খুব প্রয়োজন।