বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে আইফোন নির্মাতা ফক্সকনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু চীনে
তাইওয়ানভিত্তিক আইফোন নির্মাতা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সকনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে চীনের কর কর্তৃপক্ষ। এমন তথ্য জানিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস বলেছে, কর কর্মকর্তারা চীনের দুটি প্রদেশে ফক্সকনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে। এদিকে ফক্সকন জানিয়েছে, তারা তদন্তে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী জানুয়ারিতে তাইওয়ানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন ফক্সকনের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের টেরি গউ।
টেরি গউ বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি তাইওয়ানকে ‘পরবর্তী ইউক্রেন’ হওয়া থেকে রক্ষা করতে চান। কিন্তু এ ঘটনার দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে তাঁর কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করল চীন।
ফক্সকনের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি চীনা কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের এমন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি অ্যাপলের তৈরি আইফোনের জন্য অন্যতম বৃহত্তম সরবরাহকারী হলো ফক্সকন। কোম্পানিটি বলেছে, তারা সারা বিশ্বে যেখানেই কাজ করে, সেখানেই আইনি বিষয় মেনে কাজ করা তাদের মৌলিক নীতি। বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, ‘এখানেও আমরা সক্রিয়ভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করব।’
এদিকে ফক্সকনের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশের পর গতকাল সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২ শতাংশ নেমে যায়। অন্যদিকে বাজারে লেনদেনের আগে অ্যাপলের শেয়ার কমেছে প্রায় ১ শতাংশ।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনেক দিন ধরেই বাণিজ্যক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে ক্রমাগত উত্তেজনা চলছে। চীনের কাছে চিপ বিক্রি সীমিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যেমন গত সপ্তাহে এনভিডিয়াসহ আরও কিছু মার্কিন কোম্পানির তৈরি উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চিপ চীনের কাছে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিপরীতে চীনও গ্রাফাইটসহ বিভিন্ন কাঁচামাল রপ্তানি সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ রকম অবস্থায় ফক্সকনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর ঘটনা চীনের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবেই মনে করা হচ্ছে।
এ ছাড়া তাইওয়ানের স্বাধীনতা প্রশ্নে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। চীন তাইওয়ানকে নিজের অংশ মনে করে। তবে এর বিরোধিতা করছেন তাইওয়ানের জনগণের একটা বড় অংশ ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
এ রকম পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন টেরি গউ। এর মাধ্যমে তিনি তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন।
নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার সময় টেরি গউ জানান, তিনি চীনকে ভয় পান না। তিনি বলেন, ‘চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কথা না শুনলে যদি ফক্সকন থেকে আমার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে আমি তাদের সেটা করতে বলব।’ এমন বক্তব্য দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন তাইওয়ানের সুপরিচিত ও স্পষ্টভাষী এই ব্যবসায়ী।
গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, তাইওয়ানের অনেক লোক সন্দেহ করছেন যে টেরি গউ প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণেই ফক্সকনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, বাণিজ্যযুদ্ধে পাল্টা আঘাত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি অ্যাপলকে লক্ষ্য করে তদন্ত শুরু করেছে চীন।