অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ভারতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এফডিআই
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ভারতে নিট এফডিআই এসেছে ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ফলে দেশটির আসন্ন বাজেটের আগে সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল-অক্টোবরে নিট মাত্র ১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার এফডিআই এসেছে, ২০১২-১৩ সালের পর যা সবচেয়ে কম। এ সময় মোট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার। কিন্তু এ সময়ে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ ভারত থেকে বেরিয়ে গেছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।
এ পরিস্থিতিতে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস মনে করছে, এটা মোদি সরকারের প্রতি ‘করপোরেট জগতের অনাস্থা’। এই বাস্তবতায় এফডিআইয়ের গতি ফেরাতে বাজেটে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার উৎপাদনভিত্তিক উৎসাহ প্রকল্প (পিএলআই) ঘোষণার পরিকল্পনা করছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, বাজারে কেনাকাটা কমে গেছে বলে বিনিয়োগ আসছে না। আয়কর ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো শিল্পমহলকে ভীত–সন্ত্রস্ত করে রেখেছে। বিষয়টি হলো, মাত্র ৪-৫টি শিল্পগোষ্ঠী মোদি জমানায় ব্যবসা করতে পারবে বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। এখন নতুন করে প্রমাণ হলো, বেসরকারি শিল্প মহল ভারতে বিনিয়োগ করতে চাইছে না।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরির ক্ষেত্রে ২৫ হাজার কোটি রুপির পিএলআই ঘোষণা হতে পারে বাজেটে। অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিয়েছে। এবার সেই প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় যাবে। তারপর তা বাজেটে ঘোষণা করা হবে। উৎসাহ দেওয়া হবে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, ব্যাটারি, ডিসপ্লের মতো যন্ত্রাংশ তৈরিতে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আশা, ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ আসতে পারে।
ভারতের শেয়ারবাজার থেকেও বিদেশি বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চীন বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে। সে কারণে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের পুরোনো প্রিয় বাজার চীনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। তাঁদের মনে আশাবাদ, অর্থনীতি চাঙা করতে বেইজিং যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তাতে চীনের শিল্প খাতের মুনাফা বাড়বে, উৎপাদনও বাড়বে।
বিনিয়োগকারীদের এই প্রবণতায় বোঝা যাচ্ছে, চীনের বাজারের বিষয়ে তাঁরা ক্রমেই আরও আশাবাদী হয়ে উঠছেন। ওয়াল স্ট্রিটের বড় ব্যাংকগুলো এখনো মনে করে, আগামী এক দশক বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হবে ভারতের শেয়ারবাজার। যদিও বিনিয়োগকারীরা এ বিষয়ে সতর্ক যে ভারতের বাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির স্টক অতিমূল্যায়িত হচ্ছে। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে।