সরকারের ব্যয় নিয়ে জটিলতা কাটছে না যুক্তরাষ্ট্রে, শেষ মুহূর্তে এড়াল শাটডাউন
সরকারি ব্যয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান জটিলতা কাটছে না। আবারও শাট ডাউনের মুখে পড়তে যাচ্ছিল দেশটি, যদিও শেষ মুহূর্তে তা থেকে রক্ষা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সময়সীমার ঠিক কিছুক্ষণ আগে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে এই বিল পাস হয় এবং তার পর সিনেটেও অনুমোদিত হয়।
এই বিল অনুসারে, সরকার আগামী মার্চ পর্যন্ত ব্যয় অব্যাহত রাখতে পারবে। এর মধ্যে যেমন আছে দুর্যোগের ত্রাণ, তেমনি কৃষিবিষয়ক ব্যয়। কিন্তু এ সময় পর্যন্ত সরকারকে জাতীয় ঋণের ঊর্ধ্বসীমা স্থগিত রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি ছিল, ‘রিপাবলিকানরা বিষয়টি আমলে নিক।’ খবর সিএনএনের
এর আগে গতকাল শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার কারণে আইনপ্রণেতারা নতুন ঐকমত্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প এর আগে এক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভেস্তে দিয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, যদি শাটডাউন করতে হয়, তাহলে জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকতে থাকতেই যেন তা হয়, তাঁর ক্ষমতা নেওয়ার পরে নয়।
সম্প্রতি ফেডারেল ব্যয় বিল বাতিল করেন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার মাইক জনসন। তার পর থেকেই শাটডাউনের আশঙ্কা বাড়তে শুরু করে। আজ শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোরে সরকারের ব্যয়–সংক্রান্ত তহবিল ফুরিয়ে যাওয়ার কথা। ফলে সরকারের ব্যয় মেটানোর অর্থ না থাকলে কার্যক্রম বন্ধ বা শাটডাউন হয়ে যেত। শেষমেশ তা হয়নি।
মার্কিন সরকারের ঋণ জাতীয় ঋণসীমা অতিক্রম করে যাওয়ায় নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গত দেড় বছরে কয়েকবার এই শাটডাউনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের ১৪ মার্চ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ফেডারেল ব্যয় বিল উত্থাপন করা হয়। তখন এই বিলের প্রবল বিরোধিতা করেন রিপাবলিকান সদস্যরা। সেই বিলকে ‘ভয়ানক ক্ষতিকর’ বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি ইলন মাস্ক। নভেম্বরে ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বিলটি বাতিলের কথা ঘোষণা করেন স্পিকার জনসন।
এই নির্বাচনে ট্রাম্পের হয়ে প্রচারে ৩০ কোটি ডলার খরচ করেছেন মাস্ক। ‘প্রিয় বন্ধু’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) করা পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জনগণের কণ্ঠ বিজয়ী হয়েছে।’
শাটডাউন এড়াতে রিপাবলিকানরা নতুন একটি ব্যয় বিল উত্থাপন করে গত বৃহস্পতিবার। এ নিয়ে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে ভোটাভুটি হয়। কিন্তু সেখানে ১৭৪-২৩৫ ভোটে হেরে যাওয়ায় বাতিল হয় সেই বিল। তবে কিছু সংশোধনীর পর বিলটি পাস হয়।
শাটডাউন হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন ছোট ব্যবসায়ীরা। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। শাটডাউন হলে বাধ্যতামূলকভাবে সব সরকারি কর্মীকে ছুটিতে পাঠায় মার্কিন সরকার। অত্যাবশ্যকীয় সেবা, যেমন সেনা, পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিসের মতো বিভাগ এর আওতাভুক্ত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ৩৬ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এক সময় দেশটির জাতীয় ঋণসীমা ছিল ৩৩ ট্রিলিয়ন। কিন্তু কোভিডের সময় প্রণোদনা, চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন ও ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মার্কিন সরকারের ব্যয় বেড়েছে। সে কারণে তাদের ঋণসীমা স্থগিত করতে হয়েছে। যদিও এ নিয়ে ডেমাক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে মতবিরোধ ছিল।
মার্কিন কংগ্রেসের নেতারা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আংশিক শাটডাউন এড়াতে কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২৪ সালের মোট ব্যয়ের বিষয়ে ঐকমত্যে আসেন। রিপাবলিকান হাউস স্পিকার মাইক জনসন তখন বলেন, চলতি বছরে মার্কিন সরকার মোট ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে। এর মধ্যে সামরিক খাতে ব্যয় হবে ৮৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলার আর অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে ৭০ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। যদিও এসব সংখ্যায় কিছুটা অসামঞ্জস্য এখনো রয়ে গেছে। এই ঐকমত্যের খসড়া এখন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেট সদস্যদের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।