শাটডাউন এড়াতে সাময়িক অর্থায়ন, যুক্তরাষ্ট্রে এরপর কী ঘটবে
বেশ কয়েক দিনের অচলাবস্থার পর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত একটি বিল পাস করতে সমর্থ হয়েছে, যার আওতার মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার তার কার্যক্রম চালাতে পারবে। অর্থ জোগানোর এই বিল যদি পাস না হতো, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন ঘটতে পারত এবং ফলাফল হতে পারত বিপর্যয়কর।
সিএনএন জানিয়েছে, তহবিল জোগানোর যে বিল পাস হয়েছে, সেটি সাময়িক সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করবে। নভেম্বরের ১৭ তারিখ পর্যন্ত সরকার কার্যক্রম চালাতে পারবে। এরপর শাটডাউন এড়াতে হলে আইনপ্রণেতাদের অবশ্যই আরেকটি অর্থায়ন বিল পাস করতে হবে।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি সাময়িক এই বিলের ব্যাপারে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন। তবে তাঁর নিজের রিপাবলিকান পার্টির কিছু কট্টর সদস্য এই বিলের বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন। সিনেটে অবশ্য দুই দলের সদস্যরা বিলটি পাস করেন এবং শনিবার রাতেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এতে স্বাক্ষর করেন।
বিলটি অল্প সময়ের জন্য সরকারকে তহবিল জোগাবে। তাহলে এরপর কী হবে?
যেসব কার্যক্রম চলবে
ফেডারেল সরকারের ২২ লাখ কর্মী ও ১৩ লাখ সক্রিয় সৈন্য বেতন পাবেন। শাটডাউন হলে তাঁরা আপাতত কোনো বেতন পেতেন না। ফলে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও তাদের আর্থিক কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।
আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও আপাতত সমস্যা হবে না। শাটডাউন হলে আকাশ পরিবহনে বড় রকমের ঝক্কি হতে পারত। ২০১৯ সালের শাটডাউনের সময় পরিবহন নিরাপত্তা দপ্তরের শত শত কর্মী বেতন না পেয়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কাজে যোগ দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন।
শনিবার রাতে পাস হওয়া বিলে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে এ দপ্তর কার্যকর থাকে। শাটডাউন হলে লাখ লাখ ডলারের ক্ষতি হতে পারত এবং এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আবার চালু করতে সংস্থাটিকে বেগ পেতে হতো।
ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ নেই
সাময়িক অর্থায়নের বিলটিতে ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত তহবিল জোগানোর কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কেভিন ম্যাককার্থি যে বিল পেশ করেছিলেন, তাতে যুদ্ধরত দেশটির জন্য অতিরিক্ত সাহায্য দেওয়ার কোনো বিধান রাখা হয়নি। প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যরা ঠিক এটিই চেয়েছিলেন। তবে এ ব্যবস্থা ডেমোক্র্যাটদের খুশি করতে পারেনি।
এখন পর্যন্ত কংগ্রেস ইউক্রেনের জন্য ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সাহায্য অনুমোদন করেছে। আগস্টে হোয়াইট হাউস আরও ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার সাহায্যের জন্য কংগ্রেসকে অনুরোধ জানায়। গত মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে আরও বেশি সহায়তার জন্য আবেদন জানান।
কিছু রিপাবলিকান সদস্য ইউক্রেনকে আরও বেশি অর্থ দেওয়ার বদলে বাইডেন প্রশাসনকে সীমান্ত নিরাপত্তা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ খাতের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
এরপরে কী?
সোমবার পর্যন্ত কংগ্রেসের দুই কক্ষের অধিবেশনই মুলতবি থাকবে। ফলে ক্যাপিটল হিলে তাঁরা ফিরে আসার পর এ নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের ছুটি শুরু হওয়ার আগে তাদের অবশ্যই আরেকটি অর্থায়ন বিল অনুমোদন করতে হবে।
সুতরাং একটি দীর্ঘমেয়াদি বিল পাসের জন্য এক মাসের বেশি সময় তাদের হাতে রয়েছে। তবে শনিবারে বিল পাসের সময় রিপাবলিকান পার্টিতে গভীর বিভক্তি দেখা গেছে। সুতরাং ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন আদায়ের আগে রিপাবলিকান পার্টিকে বিভক্তি দূর করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
এর চেয়েও জটিল পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। কেভিন ম্যাককার্থিকে স্পিকারের পদ থেকে সরাতে চান অনেক কট্টর রিপাবলিকান সদস্য। তাঁরা যদি এ ব্যাপারে ভোটাভুটি করতে চান, তাহলে অর্থায়ন বিলের অগ্রগতি থেমে যেতে পারে। তবে কট্টর রিপাবলিকানরা ঠিক কখন ওই ভোটাভুটি চান, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
দীর্ঘমেয়াদি বিল
দুটি বিষয়ে হাউসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এ দুটি বিষয় হলো, সীমান্ত নিরাপত্তা ও ইউক্রেনের জন্য সহায়তা। এই মতপার্থক্যের কারণে বিলটি চূড়ান্ত করতে দেরি হচ্ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র শাটডাউনের একেবারে কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।
দীর্ঘমেয়াদি বিল নিয়ে যখন দর–কষাকষি শুরু হবে, তখন ডেমোক্র্যাটরা ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে আবারও প্রস্তাব আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা চাইবে বিলে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে সংশোধনী। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত রিপাবলিকানরা একমত হতে পারেনি যে ঠিক কী ধরনের সংশোধনী তারা চায়।
হাউসের ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব শনিবার সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে কংগ্রেসের অধিবেশন শুরু হলে কেভিন ম্যাককার্থি ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য একটি প্রস্তাব ভোটাভুটির জন্য পেশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সিনেটের দুই দলের নেতৃত্বই ইউক্রেনকে আরও তহবিল জোগাতে ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে’ একটি ভোটাভুটির আয়োজন করতে অঙ্গীকার করেছেন।