বিশ্ববাজারে আবার ডলার তেজি, অন্য প্রধান মুদ্রাগুলোর পরিস্থিতি কী
সপ্তাহের প্রথম দিনে আজ পশ্চিমা বিশ্বে মার্কিন ডলার দৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা মূলত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এই দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির ওপর নির্ভর করবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের নীতি সুদহার কী হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, কয়েক মাস ধরে বিশ্বের মুদ্রাবাজারের মূল বৈশিষ্ট্য হলো ক্যারি ট্রেডিং; ফরেক্স বা বিদেশি মুদ্রা ব্যবসায়ীরা দুটি মুদ্রার মধ্যে সুদের হারের পার্থক্যকে পুঁজি করে এই বাণিজ্য করে। এটি হলো কম সুদের হার–সংবলিত মুদ্রায় ঋণ নেওয়া এবং যে মুদ্রায় সুদের হার বেশি, সেই মুদ্রায় ঋণ দেওয়া। এই ব্যবস্থায় নিম্ন সুদহার–সংবলিত মুদ্রার দর কমে এবং ডলারের মতো যেসব মুদ্রায় সুদহার বেশি, সেসব মুদ্রার বাড়বাড়ন্ত হয়।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা খুব একটা স্থিতিশীল নয়। এই পরিস্থিতিতে নীতি প্রণেতারাও সুদহার কমানোর বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী নন।
মুদ্রাবাজারে একধরনের জোড়া থাকে। দেখা যাচ্ছে, এই বাজারে সবচেয়ে সাধারণ যেসব জোড়া দেখা যায়, তাদের মধ্যকার ব্যবধান অনেকটা কমে এসেছে। উদাহরণ হিসেবে ইউরোর কথা বলা হয়েছে। গত সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে ইউরোর দর শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বাড়লেও এখন প্রতি ইউরোর দর ১ দশমিক ০৮ ডলার। অর্থাৎ গত এক বছর যে সীমার মধ্যে এই দুই মুদ্রার লেনদেন হয়েছে, এখনো তা সেই সীমার মধ্যেই আছে। তবে আজ সোমবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় স্থানেই সরকারি ছুটি থাকায় মুদ্রাবাজারে তেমন একটা লেনদেন হচ্ছে না।
এই সপ্তাহের বুধবার জার্মানির মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে; ইউরো অঞ্চলের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে শুক্রবার। এই দুই পরিসংখ্যানের ওপর ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে। বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, আগামী সপ্তাহে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কমাবে।
ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দর গত প্রায় এক বছর ধরে একই জায়গায় আছে—এক পাউন্ড সমান এখন ১ দশমিক ২৭৩৫ ডলার। এ ছাড়া অস্ট্রেলীয় ও নিউজিল্যান্ড ডলারের মান সম্প্রতি কিছুটা কমেছে; অর্থাৎ এদের বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে। মূলত ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাচ্ছে না—এই ধারণা বাজারে ছড়িয়ে পড়ার কারণে ডলারের দর আবার বাড়ছে।
এদিকে সুইস ফ্রাঁ ইউরোর তুলনায় দর হারিয়েছে। পুরো বছরেই ফ্রাঁর দাম কমেছে। গত বছরের এপ্রিলের পর সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার দাম ইউরোর বিপরীতে সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। গত সপ্তাহে চীনের মুদ্রা ইউয়ানও ডলারের বিপরীতে দর হারিয়েছে। ডলারের দাম এখন ৭ দশমিক ২৪ ইউয়ান। মে মাসের শুরুতে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের যে দাম ছিল, এখন দাম তার চেয়ে কমে গেছে।
চলতি মাসে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দাম বেড়েছিল। এপ্রিলের শেষ ও মে মাসের শুরুর দিকে দেশটির কর্তৃপক্ষ ইয়েনের দাম বাড়াতে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিল বলে সন্দেহ করা হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে জাপানি মুদ্রার দাম বাড়ে। তবে ইয়েনের দাম আবার আগের পর্যায়ে ফিরে গেছে।
এদিকে আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ৩১ মে চলতি মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক প্রকাশিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে। ধারণা করা হচ্ছে, এ মাসেও মূল্য সূচক স্থিতিশীল থাকবে। যদি মূল্যস্ফীতির হার বাড়ে বা কমে, তাহলে মুদ্রাবাজারে তার প্রভাব পড়বে।
এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার হ্রাস এবং সে মাসে দেশটির খুচরা বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে ডলারের দর কিছুটা কমেছে। তবে গত সপ্তাহে দেশটির পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স বা পিএমআই সূচক শক্তিশালী হওয়ার কারণে ডলার শক্তিশালী হয়েছে।