এশিয়ার যেসব ধনী একের পর এক হোটেল খুলছেন সিঙ্গাপুরে
সিঙ্গাপুরের ভ্রমণ খাত ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আর সেই খবর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হোটেল ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অন্তত ১০ জন শতকোটি ডলারের মালিক নতুন হোটেল নির্মাণ ও ব্যবসা সম্প্রসারণে সিঙ্গাপুরে ৪৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছেন। সেসব ব্যবসায়ীর মধ্যে আছেন হংকংয়ের পানসি হো ও ইন্দোনেশিয়ার সুকান্ত তানোতো।
ফোর্বস ম্যাগাজিন জানাচ্ছে, সিঙ্গাপুরের অরচার্ড রোডে বেশ কয়টি নতুন হোটেল নির্মিত হবে। সড়কটিই নগররাষ্ট্রের বিকিকিনির মূল জায়গা। এই সড়ক ও আশপাশের এলাকা নতুন করে সাজানোর যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, তার অংশ হিসেবেই ওই সড়কে এসব হোটেল নির্মাণ করা হবে। ইউওএল গ্রুপ অরচার্ড রোডে ফেবার হাউস বিল্ডিংয়ের জায়গায় ১৯ তলা হোটেল ভবন নির্মাণে কাজ শুরু করেছে, যেখানে অতিথিদের জন্য ২০০ কক্ষ থাকবে।
ইউওএল গোষ্ঠী অরচার্ড রোড থেকে কয়েকটি সড়ক দূরে এই কিছুদিন আগেই আরেকটি হোটেল উদ্বোধন করেছে। গত জুন মাসে চালু হয়েছে ‘প্যান প্যাসিফিক অরচার্ড’ নামের এই হোটেল। ৩৪৭ কক্ষের এই বিলাসবহুল হোটেলে চারটি উন্মুক্ত বসার জায়গা আছে, সেই সঙ্গে ২৩ তলাবিশিষ্ট এই ভবন ৭ হাজার ৩০০ বর্গমিটার দৈর্ঘ্যের গাছগাছড়া দিয়ে আচ্ছাদিত। ফলে, হোটেলটি ইউওএলের অন্যতম ফ্ল্যাগশিপ সম্পদে পরিণত হয়েছে, যার নিয়ন্ত্রণ সিঙ্গাপুরের ব্যাংকিং ও সম্পদ খাতের ধনকুবের উই চো ইয়র হাতে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার শতকোটিপতি মোকতার রিয়াদির ওইউই গোষ্ঠী হিলটন অরচার্ড পুনরায় চালু করে। এই হোটেলের ১ হাজার ৮০টি কক্ষ সিঙ্গাপুরের কৃষি ঐতিহ্যের আদলে পুনরায় সজ্জিত করা হয়েছে। হোটেলটির আগের নাম ছিল ম্যান্ডারিন অরচার্ড।
শহরের অরেঞ্জ গ্রোভ রোডের কাছে শতকোটিপতি বকতিয়ার করিমের ইনভিকটাস ডেভেলপমেন্ট ১৪৩ কক্ষের বুটিক হোটেল নির্মাণ করছে, যার নাম দ্য স্ট্যান্ডার্ড। আগামী বছর এই হোটেল চালু হওয়ার কথা।
অরচার্ড রোডের খুব কাছাকাছি দ্য কোমো মেট্রোপলিটন সিঙ্গাপুর এ মাসেই চালু হওয়ার কথা। ১৫৬ কক্ষবিশিষ্ট এই হোটেল নির্মাণ করেছে কোমো হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস। সিঙ্গাপুরভিত্তিক এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হলেন ক্রিস্টিনা ওং, তিনি আবার হোটেল প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওং বেং বেংয়ের স্ত্রী।
মূলত, মহামারির পর নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কারণে সেখানকার এই হোটেলগুলো লাভবান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বছরের জুলাই মাসে লায়ন সিটি নামে পরিচিত এই শহরে পর্যটকদের আগমন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। চীনা পর্যটকদের সিঙ্গাপুরে আগমন আবার বৃদ্ধির কারণে এটা হয়েছে বলে সিঙ্গাপুর পর্যটন বোর্ডের সূত্রে জানিয়েছে ফোর্বস। সিঙ্গাপুর সরকার আশা করছে, চলতি বছর সে দেশে ১ কোটি ৪০ লাখ পর্যটক আসতে পারেন, যাঁরা সেখানে ১৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারেন।
ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এফসিএম কনসালটিংয়ের সূত্রে ফোর্বস জানিয়েছে, পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধির কারণে সিঙ্গাপুরের হোটেলভাড়া রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। চলতি মাসে গড়পড়তা এক রাতের জন্য কক্ষের ভাড়া ৬৪৫ মার্কিন ডলারে উঠেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। ফর্মুলা ওয়ান সিঙ্গাপুর গ্রাঁ প্রির মতো প্রতিযোগিতা সেখানে হওয়ার কারণে দেশটিতে হোটেলভাড়া বেড়েছে।
ফর্মুলা ওয়ান প্রতিযোগিতার সার্কিট বা সড়কের আশপাশের হোটেলগুলো ভাড়ার সঙ্গে প্রিমিয়াম আরোপ করেছে। মেরিনা বে স্যান্ডসের (এমবিএস) মতো হোটেলের কক্ষ ভাড়া প্রতিযোগিতার সপ্তাহান্তে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারে উঠে যায়, অথচ আগের মাসে সেই হোটেলের ভাড়া ছিল এর অর্ধেক। এমবিএসের মতো হোটেল এখন সম্প্রসারণে যাচ্ছে; নতুন টাওয়ার নির্মাণ করছে তারা, যেখানে থাকবে আরও এক হাজার স্যুইট। বর্তমানে এমবিএসে ২ হাজারে ৫৬১টি কক্ষ আছে।
সিঙ্গাপুরের বিলাসবহুল হোটেল মন্ড্রিয়ান ডাক্সটনের মহাব্যবস্থাপক রিবার্ট সি হাউক হোটেল ব্যবসার বিষয়ে বেশ আশাবাদী। ফোর্বস ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের আঞ্চলিকভাবে অন্যান্য শহরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে ঠিক, কিন্তু এখন সিঙ্গাপুরকে বিশ্বের কেন্দ্র বলে মনে হচ্ছে।’
এ পরিস্থিতিতে আরও অনেক হোটেল এখন সিঙ্গাপুরে ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবছে।
সারা বিশ্বে বিনিয়োগকারীদের সামনে এখন মূল বাধা হচ্ছে উচ্চ সুদহার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের অনুসরণে বিশ্বের প্রায় সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে চাইছেন না।
কিন্তু সিঙ্গাপুরের হোটেল ব্যবসা এখন এত জমজমাট যে সিঙ্গাপুরের হোটেল টাইকুন চু চং এনগনের কন্যা ক্যারোলিন ফোর্বস এশিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সুদহার বেশি হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সিঙ্গাপুরের হোটেল খাতে বিনিয়োগ অলাভজনক হবে না।