ইসরায়েলি অস্ত্রের শীর্ষ ক্রেতা ভারত, গাজা যুদ্ধের পরও রপ্তানি কমেনি

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারতের নয়া দিল্লিতে পালাম এয়ার ফোর্স স্টেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিছবি: রয়টার্স।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় শুরু করা যুদ্ধে বিপুল সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করছে ইসরায়েল। তবে এ যুদ্ধের কারণেও ইসরায়েলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ভারতে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রিতে প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন দেশ দুটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গত এক দশকে ইসরায়েল থেকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম (হার্ডওয়্যার) আমদানি করেছে দেশটি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে রাডার, নজরদারি যন্ত্র, যুদ্ধড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র।

হামাসের হামলার জেরে গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় নিয়মিত বোমা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। পাশাপাশি ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনীও গাজায় প্রবেশ করে অভিযান পরিচালনা করছে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধে এ পর্যন্ত ২৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে চলা এ যুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে বিপুল পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম। তবে এতে ইসরায়েলের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। বিষয়গুলো সম্পর্কে জানে, এমন ভারতীয় ও ইসরায়েলি দুটি সূত্র রয়টার্সকে এমন তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করছে, তা ভারতে প্রতিরক্ষা পণ্য সরবরাহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। গাজায় ইসরায়েলের অভিযানগুলোতে গোলাবারুদ আরও বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে। আর ভারতে রপ্তানি হচ্ছে রাডারসহ অন্য ধরনের সরঞ্জাম।

ইসরায়েলের সূত্রটি বলেছে, ভারতে ইসরায়েলের (সামরিক) রপ্তানি যেন প্রভাবিত না হয়, সেটা তারা নিশ্চিত করেছে। আর ভারতীয় কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল ভারতের কেনা অস্ত্রের সরবরাহ নিশ্চিত করছে। এর মধ্যে ড্রোনের উপকরণও রয়েছে। তবে উভয় সূত্রই বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নয়াদিল্লিতে ইসরায়েলি দূতাবাস রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের সামরিক সরঞ্জাম নির্মাতারা স্বল্প সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানগুলোতে তাদের উপস্থিতি কমিয়েছিল। তবে এখন তারা আবার সক্রিয় হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে শুরু হওয়া সিঙ্গাপুর এয়ারশোতে তাদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ দেখা গেছে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, বর্তমানে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক। ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশটি ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র কিনেছে।

অন্যদিকে ভারত যেসব দেশে থেকে অস্ত্র-সরঞ্জাম আমদানি করে, সেই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইসরায়েল। ভারত সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে রাশিয়া থেকে, এরপর ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। গত এক দশকে রাশিয়া থেকে ২ হাজার ১৮০ কোটি ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে ভারত। আর একই সময়ে ফ্রান্স থেকে ৫২০ কোটি ডলার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৫০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র কিনেছে দেশটি। এ সময়ে ইসরায়েল থেকে কিনেছে ২৯০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক অস্ত্রের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে চায় ভারত। এ জন্য দেশটি ফ্রান্স ও ইসরায়েলের মতো দেশগুলো থেকে অস্ত্র কেনা বাড়িয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ অস্ত্র উৎপাদন শিল্পকে বড় করার চেষ্টা করছে।

যেমন ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে অংশীদারত্বে হারমেস ৯০০ নামের একধরনের সামরিক ড্রোন তৈরি করছে ইসরায়েলের অস্ত্র কোম্পানি এলবিট সিস্টেমস। দক্ষিণ ভারতের একটি কারখানায় তৈরি এসব ড্রোন আবার ইসরায়েলেই রপ্তানি করা হচ্ছে।