২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ভারতে টমেটোর দাম বেড়েছে ৭০০ শতাংশ, ধনী হয়েছেন অনেক চাষি

টমেটো
ফাইল ছবি

গত জানুয়ারির ১ তারিখের পর ভারতের বাজারে টমেটোর দাম বেড়েছে ৭০০ শতাংশের বেশি। এর ফলে ভারতের অনেক কৃষক ধনী হয়েছেন। তবে আগামী সপ্তাহে সরবরাহ বাড়তে শুরু করলে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

গত রোববার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বাজারে টমেটোর দাম ছিল প্রতি কেজি ১৭৮ রুপি। দেশটির খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দেশটির বাজারে সেদিন টমেটোর গড় দাম ছিল কেজি ১২০ রুপি। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

মূলত ভারতের টমেটো উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে ভারী বর্ষণের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এতে দাম এত বেড়েছে যে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক পরিবারই টমেটো খাওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে। যদিও ভারতের অনেক প্রথাগত খাবারের অন্যতম উপকরণ হচ্ছে টমেটো।

ভারতের মহারাষ্ট্রের জুনার অঞ্চলের চাষি ঈশ্বর গায়কোয়ার ও তাঁর স্ত্রী সোনালি ১২ একর জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত তাঁরা মুনাফা করেছেন ২ কোটি ৪০ লাখ রুপি, যদিও আগের মৌসুমে তাঁরা মুনাফা করেছিলেন দেড় কোটি রুপি।

এই দম্পতির খামারে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন দিনমজুর কাজ করেন। তাঁরা এই অঞ্চলের টমেটোর অন্যতম বড় সরবরাহকারী। স্থানীয় গণমাধ্যমের সুবাদে ঈশ্বর গায়কোয়ার রীতিমতো সেলিব্রিটি বনে গেছেন, সাংবাদিকেরা তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।

ঈশ্বর গায়কোয়ার বলেন, এই মাস দেড়েক আগেও প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করে আড়াই রুপির মতো মুনাফা হতো। এমনকি ২০২১ সালে তাঁর ২০ লাখ রুপি ক্ষতিও হয়েছিল। অথচ এবার তাঁর পোয়াবারো; সরবরাহ কম, কিন্তু চাহিদা ভালো।

গত কয়েক সপ্তাহে এই দম্পতি ৩৫০ টন টমেটো সরবরাহ করেছেন। তাঁরা আশা করছেন, শিগগিরই আরও ১৫০ টন টমেটো বিক্রি করা যাবে, যদি আবহাওয়া প্রতিকূল না হয়। বছরে তাঁরা তিনবার ফসল তোলেন। এখন গাছে যে ফসল আছে, তার বয়স ১২০ থেকে ১৪০ দিন।

ভারতের কিছু অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা হওয়ায় সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। টমেটোর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বাজারে অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যেতে পারে। বিষয়টি এখন সংবাদপত্রের শীর্ষ সংবাদে পরিণত হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমেও এ নিয়ে তর্কবিতর্ক হচ্ছে। ভোক্তাদের দাবি, বৃষ্টির দেবতা ও কর্তৃপক্ষের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সরকার অনেক স্থানে ভর্তুকি মূল্যে টমেটো বিক্রি শুরু করেছে, রাস্তায় রাস্তায় চলমান ভ্যান স্থাপন করা হয়েছে। এতে কিছুটা কাজ হলেও ১৪০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে টমেটোর দাম এখনো অনেক বেশি। এমনিতেই জুলাই-আগস্ট মাসে ভারতের মতো দেশে টমেটোর দাম বেড়ে যায়, কিন্তু এ বছর দাম অতিমাত্রায় বেশি।

সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে টমেটোর দাম আগামী সপ্তাহে কমে আসবে, যদিও এই মূল্যবৃদ্ধির সুফল উৎপাদকেরা পাচ্ছেন।

গুজরাট রাজ্যের সুরাট শহরের টমেটো বিক্রেতা মহেন্দ্র নিকাম ১৩০ রুপি দামে টমেটো বিক্রি করেছেন। ইকোনমিক টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে কখনো এত দামে সবজি বিক্রি করিনি। অথচ দুই মাসের কম সময় আগে কৃষকেরা দাম না পেয়ে যেসব গাছ গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেই সব গাছের গোড়ায় টমেটো ফেলে দিয়েছিল।’

পুনেভিত্তিক স্বাধীন বাজার বিশ্লেষক দ্বীপক চাভান ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, মূল্যবৃদ্ধির কারণে নার্সারিগুলোতে টমেটোর চাহিদা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, ‘সন্দেহ নেই, এই চাহিদা বা চাঙাভাব সাময়িক, এমনকি সেপ্টেম্বর মাসে বাজার টমেটোতে সয়লাব হয়ে যেতে পারে।’