২০০০ রুপির নোট বদলের ঝক্কি এড়াতে কীই–না কিনছেন ভারতীয়রা
হঠাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন ভারতীয়রা। এমনকি দামি ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতেও পিছপা হচ্ছেন না তাঁরা। এর কারণ আর কিছু নয়—দেশটিতে ২০০০ রুপির নোট বাতিল করা হয়েছে, তবে ভারতীয়রা নোট বদলের ঝক্কিতে না গিয়ে তা দিয়ে বেশি বেশি কেনাকাটা করছেন। সেই কেনাকাটার মধ্যে মৌসুমি ফল আম থেকে শুরু করে বিলাসবহুল ঘড়ি—কী নেই।
সে জন্য এবার ব্যাংকে মানুষের অত ভিড় দেখা যাচ্ছে না। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, মুম্বাই ও নয়াদিল্লির মতো শহরের ব্যাংকগুলোয় খুবই অল্প কিছু মানুষ ২০০০ রুপির নোট বদলে নিচ্ছেন।
সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার শাখায়। কারণ, একবার ২০০০ রুপি পর্যন্ত নোট বদলের ক্ষেত্রে তারা কোনো নথিপত্র চাইছে না। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া গত শুক্রবার ২০০০ রুপির নোট বাতিলের ঘোষণা দেয়। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব নোট বদলে নিতে হবে।
তবে ঠিক কী কারণে এবার ২০০০ রুপির নোট বাতিল করা হলো, সে বিষয়ে খুব পরিষ্কারভাবে কিছু বলা না হলেও বিশ্লেষকেরা রয়টার্সকে বলেছেন, দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ও আগামী বছর জাতীয় নির্বাচনের আগে যাতে নগদ অর্থের লেনদেন খুব বেশি না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা।
তবে এবার ২০১৬ সালের রাতারাতি নোট বাতিলের মতো বিষয়টি অতটা বিশৃঙ্খল হবে না। সেবার হুট করেই ভারতের বাজারে প্রচলিত ৮৬ শতাংশ মুদ্রার ব্যাংক নোট বাতিল করা হয়। এবার চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ভারতীয়রা এবার আর সেই ঝক্কি আর পোহাতে চাইছেন না। সেই সঙ্গে নোট জমা দিলে আবার আয়কর বিভাগের আতশি কাচের নিচে চলে আসতে হবে, সে জন্যও অনেকে এবার ব্যাংকে নোট জমা দিতে চান না। তার চেয়ে বরং ২০০০ রুপির নোট ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা—শুক্রবার থেকে তাই ভারতীয়রা দোকানে দোকানে হানা দিচ্ছেন।
ভারতের দোকানিরাও এটাকে বিক্রি বাড়ানোর সুযোগ হিসেবেই দেখছেন। মঙ্গলবার অনেক দোকানি রয়টার্সকে বলেছেন, এই বাস্তবতায় প্রথম দিন তাঁরা নোট বিনিময় করেছেন।
মুম্বাইয়ের ক্রফোর্ড মার্কেটের আম বিক্রেতা মোহাম্মদ আজহার রয়টার্সকে বলেছেন, ‘শনিবার থেকে অনেক মানুষ ২০০০ রুপির নোট দিয়ে আম কিনছেন। প্রতিদিন আমি এখন ৮ থেকে ১০টি ২০০০ রুপির নোট পাচ্ছি। আমি তা নিচ্ছি, এ ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ ব্যবসা করতে গেলে আমাকে তা করতেই হবে। নোট বৈধ, তাই ভয় নেই।’
মুম্বাইয়ে বিলাসবহুল ঘড়ি রাডোর দোকান ব্যবস্থাপক মাইকেল মার্টিস বলেছেন, ২০০০ রুপির নোট বাতিলের ঘোষণার পর দোকানে এই নোট আসার পরিমাণ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সেদিনের পর ঘড়ি বিক্রিও বেড়েছে বলে তিনি জানান।
খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জোমাটো টুইট বার্তায় বলেছে, শুক্রবার এই ঘোষণার পর তাদের ৭২ শতাংশ ক্যাশ অন ডেলিভারিতে ২০০০ রুপির নোট দেওয়া হচ্ছে। তবে কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেছেন, এই টুইট মজার ছলে করা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। তবে ২০০০ রুপির নোট তাঁরা ঠিক কতটা পাচ্ছেন, সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তাঁরা।
আবার অনেক দোকানি নোট বদলের ঝক্কির কথা ভেবে ২০০০ রুপির নোট নিতে চাইছেন না। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের বেক রেস্তোরাঁর মালিক রয়টার্সকে বলেন, ‘ব্যাংকে গিয়ে এসব নোট বদলের ঝক্কি নিতে চাই না, সে জন্য আমি ২০০০ রুপির নোট নিচ্ছি না।’
২০১৬ সালে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের পর ভারতে ২০০০ রুপির নোট বাজারে ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার হঠাৎ সেই ২০০০ রুপির নোট বাতিল করা হলো।
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বলেছে, প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে তা করা হয়েছে। এটা মুদ্রা ব্যবস্থাপনারই অংশ।
ভারতের এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, ২০০০ রুপির নোট ছাপানো বন্ধ হয়েছে আরও আগে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, অন্যান্য মানের নোট বাজারে পর্যাপ্ত থাকার কারণে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকেই এই ব্যাংক নোট ছাপানো বন্ধ। এবার তা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে।