যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্প রক্ষা করতে চান ট্রাম্প
আমদানি করা গাড়িতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ির বাজার রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এবারের নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই ট্রাম্প বলেছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মূল হাতিয়ার হবে শুল্ক। ইতিমধ্যে অঙ্গীকার রক্ষার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি গত সোমবার। খবর সিএনএন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ির বাজার রক্ষা সহজ হবে না, সমস্যা আছে। কারণ হলো, গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয়, ইঞ্জিন বা যন্ত্রাংশ অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ট্রাম্প কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করবেন, তা-ই বড় প্রশ্ন।
যদিও কত শতাংশ যন্ত্রাংশ দেশে তৈরি হয় মার্কিন সরকারের, সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা আছে। বিষয়টি হলো, কানাডায় তৈরি যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় বিবেচনা করা হয়। ‘আমেরিকান মেড’ বা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি গাড়ির হিসাব করা হলে দেখা যাবে, তা ৭৫ শতাংশের বেশি হবে না। যার অর্থ ২৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাইরের দেশগুলো থেকে আসে। ট্রাম্প যদি দেশজুড়ে বিক্রি হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িতে ব্যবহৃত আমদানি করা যন্ত্রাংশের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন, তাহলে গাড়ির দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।
মার্কিন সরকারের তথ্যমতে, কেবল দুটি গাড়ি ৭৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। গাড়ি দুটি হলো—টেসলা মডেল ৩ ও হোন্ডা রিজলাইন। যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি যন্ত্রাংশ রয়েছে, এমন বেশির ভাগ যানবাহন টেসলা ও বিদেশি ব্র্যান্ডের। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে সংযোজন করা গাড়ির মধ্যে আছে হোন্ডা, হুন্দাই, কিয়া, নিসান, মাজদা, সুবারু ও টয়োটা।
যন্ত্রাংশ ও উপকরণের ওপর নির্ভর করে গাড়িশিল্প। এর মধ্যে যেমন নাট-বোল্টের মতো সস্তা উপকরণ, তেমনি আছে কম্পিউটার চিপ ও ইলেকট্রনিকসের মতো ব্যয়বহুল উপকরণ। মার্কিন কারখানাগুলোয় এসব উপকরণ চাহিদা অনুসারে যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদিত হয় না।
ট্রাম্পের দাবি, শুল্ক মূলত রপ্তানিকারক বিদেশি রাষ্ট্র পরিশোধ করবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আমদানি করা পণ্য যারা কেনে, তাদেরই শুল্কের বোঝা বহন করতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত খরচ গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। শুল্কের ভারও ক্রেতাদের বহন করতে হবে।
এদিকে ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির জেরে গত মঙ্গলবার বেশির ভাগ গাড়ি কোম্পানির শেয়ারদর কমে যায়। জেনারেল মোটরসের (জিএম) শেয়ারদর ৯, ফোর্ডের ৩ ও স্টেলান্টিসের ৬ শতাংশ হ্রাস পায়। টয়োটার শেয়ারের দাম ২ ও হোন্ডার কমেছে ৩ শতাংশ।
এদিকে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকির প্রসঙ্গে সম্প্রতি চীন বলেছে, বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জিতবে না। সে জন্য এই যুদ্ধ শুরু করে লাভ নেই। তবে ২০১৮ সালে প্রথম ট্রাম্প জমানায় চীনের বিরুদ্ধে যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়, তার জেরে চীনের অর্থনীতির গতি কমেছে। বিনিয়োগকারীরাও দেশটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।