আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম আবার বাড়ছে, কী কারণ
হিনডেনবার্গ বিতর্ক শুরু হওয়ার পর আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি করে দিয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। গত শুক্রবার ওই তদন্ত কমিটি জানায়, তারা আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর অভিযোগের স্বপক্ষে তেমন প্রমাণ খুঁজে পায়নি। তদন্ত কমিটির এমন মন্তব্যের পর বিনিয়োগকারীরা আবার গৌতম আদানির কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনতে শুরু করেছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
চলতি সপ্তাহের চার কর্মদিবসে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম ৩১ শতাংশ বেড়েছে। আর আদানি পোর্টসের শেয়ারের দাম আবার আগের জায়গায় পৌঁছেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ পুরো আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম আরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
ভারতজুড়ে বন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও খাদ্য উৎপাদন কারখানা আছে আদানি গ্রুপের। চলতি বছরের শুরুটা ভালোই হয়েছিল গৌতম আদানির। কারণ, গত দুই বছরের তুলনায় আদানি গোষ্ঠীর সম্পদমূল্য বাড়তি ছিল ১০ গুণ। গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী গৌতম আদানি ছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। টুইটারের মালিক ইলন মাস্কের ঠিক পরেই ছিল তাঁর অবস্থান।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে জানুয়ারির শেষ দিকে। গত ২৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গোষ্ঠী নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আদানির কোম্পানিগুলো কৌশলের মাধ্যমে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছে।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাতারাতি কমতে থাকে আদানির সব শেয়ারের দাম। ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ আদানি গোষ্ঠীর ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম দুই-তৃতীয়াংশ কমে যায়। আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন ১০ লাখ কোটি রুপি কমে যায়। শীর্ষ ধনীর তালিকায় আদানি নেমে যান ৩৫তম স্থানে।
তবে এত বিপত্তি সত্ত্বেও আদানি হয়তো মনোবল হারাননি। চার মাস পর এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। চলতি সপ্তাহের চার কর্মদিবসে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম ৩১ শতাংশ বেড়েছে। আর আদানি পোর্টসের শেয়ারের দাম আবার আগের জায়গায় পৌঁছেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ পুরো আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম আরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত চার মাসে আদানি গোষ্ঠীর টিকে থাকার পেছনে অনেকগুলো কারণ ছিল। প্রথমত, আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা অংশ ছিল ভারতের রাষ্ট্রপরিচালিত বিভিন্ন অনুগত প্রতিষ্ঠান। আদানির বিপদের সময় এসব প্রতিষ্ঠান অনেকটা কম দামে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন শেয়ার কিনেছিল।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন খাতে আদানির বিনিয়োগ অনেকটা দৃশ্যমান। যেমন আদানির বেশির ভাগ বিনিয়োগ বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো অবকাঠামো প্রকল্পে। ফলে এ ধরনের খাতগুলোর মূল্য যা-ই হোক, তাতে বিনিয়োগের জন্য অনেকেই আগ্রহী ছিলেন।
এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির সুসম্পর্কও তাঁর জন্য ‘সুরক্ষা’ হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করা হয়। গৌতম আদানি ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এ সম্পর্ক কয়েক দশকের। ২০১৯ সালে সরকার গঠনের পর আদানির একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে নয়াদিল্লিতে যান মোদি।
হিনডেনবার্গ বিতর্ক শুরু হওয়ার পর থেকে গৌতম আদানি একভাবে লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে অধিকাংশ সময় তিনি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। এ ছাড়া সম্প্রতি ইসরায়েলের হাইফাতে নতুন একটি বন্দরের মালিকানা কেনেন আদানি। সে সময় মোদির বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিপক্ষ ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ছবি তুলেছেন আদানি। যদিও এখন পর্যন্ত জনসমক্ষে আদানির পক্ষে কিছু বলেননি মোদি।