আরও কঠোর মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ, তালিকাভুক্ত করল ডজনখানেক চীনা কোম্পানি

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনরয়টার্স

চীনের আরও ডজনখানেক কোম্পানির বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চীনা কোম্পানিগুলোর তালিকা তৈরি করে জানিয়েছে, তারা চীনের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি যেন চীনের জন্য সহায়ক না হয়, তা নিশ্চিত করতে এ ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটি।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকায় স্থান পাওয়া কোম্পানির মধ্যে আছে—মেমোরি চিপ নির্মাণকারী কোম্পানি ওয়াইএমটিসি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক কোম্পানি মেগভি, আলোক শনাক্ত ও ক্রমবিন্যাসকারী কোম্পানি হেসাই টেকনোলজি এবং প্রযুক্তি কোম্পানি নেটপোসা।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতির দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র মরিয়া হয়ে উঠেছে, যেভাবেই হোক চীনের উত্থান ঠেকাতে হবে। বিশেষ করে তাদের প্রযুক্তি যেন চীনের কোম্পানিগুলোর হাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে ওয়াশিংটন একের পর এক চীনা কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করছে।

ওয়াশিংটনে চীন দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন, এটা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার। তাই চীন মার্কিন সরকারের এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। সেই সঙ্গে তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে প্রতিযোগিতামূলক ও ন্যায্যতাভিত্তিক করার যে অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্র করেছিল, এ সিদ্ধান্ত তার পরিপন্থী।

এ বিষয়ে রয়টার্স ওয়াইএমটিসি, মেগভি ও হেসাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।

তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর তাৎক্ষণিক কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। তবে তালিকায় নাম ওঠার কারণে এসব কোম্পানির সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে এবং মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য এটি একটি কঠোর সতর্কতা যে চীনের এই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করলে ঝুঁকি আছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ কেবল তালিকা তৈরি করেই থেমে থাকবে না, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে তারা দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চাপও দিতে পারে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনের ‘ধারা ১২৬০-এইচে’ কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে, যার বদৌলতে এসব কোম্পানির সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের সামরিক ও বেসামরিক খাতের মধ্যে গভীর গাঁটছড়া আছে। বেসরকারি খাতের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে, সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। ফলে চীনে বেসরকারি খাতকে সরকারি খাত থেকে পৃথক করা যায় না।
ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অ্যান্ড ডেমোক্রেসির জ্যেষ্ঠ ফেলো ক্রেইগ সিঙ্গেলটন বলেন, ১২৬০ এইচ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া চীনের এই কোম্পানিগুলোর জন্য বড় ধরনের ভাবমূর্তিজনিত ক্ষতি।

অন্য যেসব কোম্পানি এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে, সেগুলো হলো চায়না থ্রি গর্জেস করপোরেশন, চায়না কনস্ট্রাকশন টেকনোলজি কোম্পানি, ইতু নেটওয়ার্ক টেকনোলজি, চেংডু জেওইউএভি অটোমেশন টেক কোম্পানি, চেংডু এম অ্যান্ড এস ইলেকট্রনিকস কোম্পানি, গুইঝু অ্যাভিয়েশন টেকনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি এবং শেনজেন কনসিস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কোম্পানি।

আরও আগে চীনের যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছিল, সেগুলো হলো এভিআইসি, বিজিআই জেনোমিক্স কোম্পানি, চায়না মোবাইল, জ্বালানি কোম্পানি সিএনওওসি এবং চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

এদিকে গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইসহ অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, চীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন পানি পরিশোধনাগার, বিদ্যুৎ গ্রিড, তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন এবং যাতায়াত কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।