প্রয়োজন না থাকলেও আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে অন্ধ্র প্রদেশ সরকার

আদানি গ্রুপফাইল ছবি: রয়টার্স

প্রয়োজন না থাকলেও ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের রাজ্য সরকার আদানি গ্রিন এনার্জির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনেছে। যদিও সরাসরি আদানির কাছ থেকে সৌরবিদ্যুৎ কেনেনি অন্ধ্র প্রদেশের রাজ্য সরকার, কিনেছে সোলার এনার্জি করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার (এসইসিআই) কাছ থেকে ঘুর পথে। এই ঘটনারও তদন্ত করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।

এসইসিআইয়ের আবেদনের মাত্র এক দিনের মধ্যে নীতিগত সম্মতি জানায় অন্ধ্রপ্রদেশ মন্ত্রিসভা। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর রাজ্য ও এসইসিআইয়ের মধ্যে ৩ হাজার ৯০০ কোটি রুপির চুক্তি হয়। নথি অনুযায়ী সেই বিদ্যুতের ৯৭ শতাংশ সরবরাহ করার কথা আদানি গ্রিনের। বিদ্যুৎ বিক্রির আবেদন থেকে শুরু করে চুক্তি—এই পুরো ঘটনার মেয়াদ মাত্র ৫৭ দিনের। এই বিদ্যুতের ৯৭ শতাংশই আদানি গ্রিন এনার্জি থেকে সরবরাহ করার কথা।

ভারতের সাবেক রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের একজন আইনি বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, ৭০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুক্তি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এই মেয়াদ ‘অস্বাভাবিক’ রকম কম। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌরবিদ্যুতের দাম কমতে পারে। ফলে চুক্তির জন্য আরও কিছুটা অপেক্ষা করা উচিত রাজ্যের।

অন্ধ্রপ্রদেশের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক ২০১৯ সালে রাজ্য সরকারকে জানায়, আপাতত সৌরবিদ্যুতের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এর দুই বছর পরে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সোলার এনার্জি করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (এসইসিআই) অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানায়, রাজ্য সরকার যেন তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে। নিয়ন্ত্রকের পরামর্শ অমান্য করে সেই আরজি মেনেও নেয় তৎকালীন জগন্মোহন রেড্ডি সরকার। ঘটনাচক্রে চুক্তি অনুযায়ী, আদানি গ্রিন এনার্জির থেকে কেনা বিদ্যুৎই রাজ্যকে সরবরাহ করার কথা এসইসিআইয়ের। এক রিপোর্টে এমনই দাবি করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে শিল্পপতি গৌতম আদানি ও আরও সাতজনের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে, এটি তার অন্যতম। অভিযোগ, এ ধরনের সব প্রকল্পের জন্য তাদের দেশ থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে আদানি গোষ্ঠী। একই সঙ্গে ২ হাজার ২০০ কোটি রুপি ঘুষ দিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের।

আদানিরা অবশ্য বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপালের দাবি, আদানির জালিয়াতির ঘটনায় কেন সেবি চেয়ারপারসন মাধবী পুরী বুচকে দায়বদ্ধ করা হচ্ছে না, সে বিষয়ে সংসদে নির্দিষ্ট প্রশ্ন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর এই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ায় এটা স্পষ্ট, মোদি সরকার আদানিকে বাঁচাতে চাইছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের আরজিতে এসইসিআই মূল বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার নাম–পরিচয় উল্লেখ করেনি। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ কেনার জন্য তাদের যে মাত্র দুটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে এবং সে দুটির মধ্যে আদানি গ্রিন যে বৃহৎ, রাজ্য সরকারের তা আগে থেকেই জানা ছিল।