ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা নির্মাণে বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নিরীক্ষার মুখে পড়েছে চীনের কোম্পানি বিওয়াইডি। ইলন মাস্কের টেসলাও ভারতে কারখানা করতে চায়। রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের কোম্পানি ঝামেলার মুখোমুখি হলেও টেসলার সঙ্গে ভারতের আলোচনা গতি পেয়েছে।
উভয় কোম্পানিই ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা করতে চাইলেও টেসলাকে দেওয়া হচ্ছে লালগালিচা সংবর্ধনা, আর বিওয়াইডি এমন নিরীক্ষার মুখে পড়েছে যে তারা ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাবই বাতিল করতে চায়।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, টেসলা থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন উদীয়মান বাজারে বিওয়াইডির সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। অন্যদিকে, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ির বাজার ভারতে টেসলা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঢুকে গেল অর্থাৎ কারখানা করতে পারলে বৈদ্যুতিক গাড়ির বৈশ্বিক বাজারে তারা অনেকটাই এগিয়ে যাবে।
টেসলার অনেক আগেই ভারতে কারখানা করার কথা ছিল। কিন্তু ভারত সরকারের নানা ধরনের আইন-কানুনের কারণে তারা ভারতে আসেনি, যদিও ভারতের বাজারে তাদের গাড়ি বিক্রি হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলে টেসলার প্রধান ইলন মাস্কের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। এর পর থেকে টেসলার সঙ্গে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আলোচনায় গতি আসে।
রয়টার্স জানিয়েছে, এখন একদম সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যক্তিগতভাবে আলোচনার খোঁজখবর রাখছেন।
আলোচনা চলছে একদম গোপনে। সাধারণত এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করমর্দনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হচ্ছে না।
ভারতে কারখানা করতে চেয়েছিল চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি বিওয়াইডি। কিন্তু তাদের প্রস্তাব নিয়ে নয়াদিল্লির নিরীক্ষার মুখে পড়ায় বিওয়াইডি তার ভারতীয় অংশীদারকে বলেছে, এই বিনিয়োগ প্রকল্প তারা বাতিল করতে চায়। রয়টার্সের আগের এক সংবাদে এই তথ্য জানানো হয়েছিল।
বিওয়াইডি জানে, ভারত-চীনের সম্পর্কের যে রসায়ন, তাতে তাদের বিনিয়োগ প্রকল্প নিরীক্ষার মুখে পড়বে এবং বিষয়টি রাজনৈতিক। তবে পরিস্থিতির যেন আরও অবনতি না হয়, সেই চেষ্টা তারা করছে।
২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকেই চীনের বিনিয়োগ ভারতের কঠোর নিরীক্ষার মুখে পড়ছে। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি ও তার উপাদান তৈরিতে চীনের আধিপত্যের কারণে এ ক্ষেত্রে চীনা কোম্পানিগুলোকে একেবারে উপেক্ষা করা সম্ভব না–ও হতে পারে। টেসলাও চীনের কাছ থেকে অনেক উপকরণ কেনে, এতে তাদের সাংহাই কারখানায় গাড়ির উৎপাদন খরচ কমেছে। টেসলাও চায়, ভারতে কারখানা করা হলে এসব চীনা কোম্পানিগুলোও আসুক।
ভারত সরকার টেসলাকে এও জানিয়েছে, তাদের চীনা সরবরাহকারীদের ভারতে কাজ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, যদি তারা স্থানীয় প্রকৌশল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্বে যায়। অথচ বিওয়াইডি স্থানীয় কোম্পানি মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে অংশীদারির প্রস্তাব দিলেও ভারত সরকার তা ভালোভাবে নেয়নি।
চীনের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, ভারতে বিওয়াইডির বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাতিল হলে চীনা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরবে। তবে এই বিষয়ে বিওয়াইডি বা টেসলা কেউই রয়টার্সের কাছে কিছু বলতে রাজি হয়নি। জুনে ইলন মাস্ক বলেছিলেন, ‘মোদি ভারতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে আমাদেরকে পীড়াপিড়ি করছেন; আমরাও ভারতে সেই বিনিয়োগ করতে চাই’।
বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের এক খবরে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ভারতের গাড়ি বাজারের ৩০ শতাংশ হবে বৈদ্যুতিক। পরিবেশদূষণ রোধে দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে ঝুঁকছে। বিওয়াইডির লক্ষ্য, ভারতের এই বিশাল বাজারে ৪০ শতাংশ হিস্যা নিশ্চিত করা। মূলত সে জন্যই তারা ভারতে কারখানা করতে চেয়েছিল।
টেসলাও চায়, এই বাজারের বড় অংশ নিজেদের হাতে আনতে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার দখল নিয়েও একধরনের ভূরাজনৈতিক খেলা শুরু হয়েছে। যে খেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি টেসলা অনেকটাই এগিয়ে গেছে।