কোটা দেওয়ার আশ্বাস ভারতের

নয়াদিল্লিতে ২২-২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এমন আশ্বাস দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

টিপু মুনশি

সাত ধরনের নিত্যপণ্যে কোটা–সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। পণ্যগুলো হচ্ছে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডাল। কোটা–সুবিধা পাওয়া গেলে ভারত থেকে যখন-তখন এসব পণ্য আমদানি বন্ধ হবে না।

ভারতের নয়াদিল্লি থেকে দেশে ফিরে সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

নয়াদিল্লিতে ২২-২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেন টিপু মুনশিসহ নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুই অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হক, মো. হাফিজুর রহমান এবং উপসচিব ফারহানা ইসলাম। অন্যদিকে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী প্রিয়ুশ গয়ালের নেতৃত্বাধীন একটি দল অংশ নেয় বৈঠকে। উভয় দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের আগের বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালে।

ভারত পেঁয়াজ ও গম রপ্তানি বন্ধ করায় মাঝে সমস্যা হয়েছিল জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য খাদ্যসংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের প্রধান সরবরাহকারী দেশ ভারত। তাই ভারত থেকে নিত্যপণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার্ষিক কোটা–সুবিধা চাওয়া হয়েছে। আমরা যা চেয়েছি, তা তারা দিতে পারবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু আমরা যদি পরে তা আমদানি না করি, তখন কী হবে—এ প্রশ্ন করেছে তারা।’

কোটা–সুবিধার পাশাপাশি পণ্যের পরিমাণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল বলে জানান টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে একটু বেশি করেই চাওয়া হয়েছিল। তারা বলেছে, পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে আন্দাজের ভিত্তিতে। কোন পণ্য বাস্তবে কত পরিমাণ লাগবে, তা নির্ধারণ করতে হবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বছরে ৪৫ লাখ টন গম, ২০ লাখ টন চাল, ৭ লাখ টন পেঁয়াজ, ১৫ লাখ টন চিনি, দেড় লাখ টন আদা, ৩০ হাজার টন ডাল এবং ১০ হাজার টন রসুন আমদানির কোটা–সুবিধা চাওয়া হয়।

এ ছাড়া বাংলাদেশি পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ২০১৭ সাল থেকে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রেখেছে ভারত। এটি আর বহাল না রাখার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে ভারতকে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দিতে আপত্তি নেই। এ জন্য এক থেকে দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, করোনার পর মেডিকেল ভিসার জন্য প্রচুর চাপ পড়েছে। সেটা দিতেই তাদের সমস্যা হচ্ছে। জানুয়ারির শেষ দিকে চাপ কমে আসবে। তখন ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসার ব্যবস্থা করা হবে।

উভয় দেশের বাণিজ্যে বিনিময় মাধ্যম হচ্ছে মার্কিন ডলার। ডলারের পরিবর্তে ভারতীয় রুপি ব্যবহারের বিষয়েও বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ কথা জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত কিছু বলতে পারিনি। কারণ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের পরামর্শ লাগবে।’

রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হয়েছে বলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সেপা বা সিইপিএ) স্বাক্ষরের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।

দেশের ১০ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ভারতের ১০ প্রতিষ্ঠানের সিইওকে নিয়ে ‘সিইও ফোরাম’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। ভারত এতে সম্মত হয়েছে। টিপু মুনশি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রাণ আছে, এফবিসিসিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠান আছে। তারা বলেছে, তাদের নামগুলো বাছাই করতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে এটি হবে।’