ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে ইরানি মুদ্রা, প্রতি ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ৭৭৭,০০০ রিয়াল
ইরানি মুদ্রা রিয়ালের দাম আজ বুধবার ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। নভেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভের পর থেকেই রিয়ালের দামে বড় পতন শুরু হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত রিয়াল ১০ শতাংশ মূল্যমান হারিয়েছে, যা তেহরানের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, প্রতি ডলারে এখন ৭ লাখ ৭৭ হাজার রিয়াল পাওয়া যাচ্ছে। তেহরানের মুদ্রা বিক্রেতারা বলছেন, যেদিন ট্রাম্প নির্বাচনে জিতেছেন, সেদিন প্রতি ডলারের দাম ছিল ৭ লাখ ৩ হাজার রিয়াল। অর্থাৎ গত ৫ নভেম্বরের পর মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানি মুদ্রার মূল্যমান একেবারে তলানিতে নেমে গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ও জ্বালানিসংকটের কারণে ইরানের মুদ্রার অবস্থা এতটা দুর্বল হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে যে যুদ্ধ চলছে, তাতে ইরান জড়িয়ে পড়েছে। রিয়ালের দাম ধরে রাখতে অতীতে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ব্যাপক পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা বিক্রি করত। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে রিয়াল পৃষ্ঠপোষকতা পেত।
গত মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ রেজা ফারজিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাজারে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ বাড়বে এবং রিয়ালের বিনিময় হারও স্থিতিশীল হবে। তিনি জানান, ২২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ইতিমধ্যে আর্থিক বাজারে ছাড়া হয়েছে।
দেশটির মুদ্রা এমন দিনে ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে যেদিন জ্বালানিসংকটের কারণে ইরানের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দেশের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি দপ্তর বন্ধ রাখা হয়। প্রবল ঠান্ডার কারণে দেশটিতে জ্বালানিসংকট আরও তীব্র হয়েছে। গত গ্রীষ্মে ইরানে বিদ্যুৎসংকট ছিল। এবার একযোগে দেখা দিয়েছে তীব্র ঠান্ডা, তুষারপাত ও বায়ুদূষণ।
ইরানে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মজুত রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মৌসুমে যখন জ্বালানির চাহিদা বাড়ে, তখন দেশটি সেই চাহিদা মেটাতে পারে না। বছরের পর বছর ধরে ইরানের জ্বালানি খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নেই, এর পাশাপাশি তারা পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটে ভুগছে দেশটি।
২০১৫ সালে ইরান যখন বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার নিয়ে চুক্তি করেছিল, তখন প্রতি ডলারে ৩২ হাজার রিয়াল পাওয়া যেত। এ বছরের ৩০ জুলাই যখন সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান শপথ গ্রহণ করেন এবং দায়িত্ব নেন, তখন প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫ লাখ ৮৪ হাজার রিয়ালে।
প্রথম দফায় ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন। ২০১৮ সালের ওই পদক্ষেপের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলতেই থাকে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইতিমধ্যে বেশ এগিয়ে গেছে। কিন্তু এ নিয়ে আরোপ করা যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দেশটি রয়েছে, তা অর্থনীতিকে রীতিমতো পঙ্গু করে দিয়েছে। তারপরও ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে এবং এখন অস্ত্র তৈরি করার মতো উন্নতমানের ইউরোনিয়ামে সমৃদ্ধ হচ্ছে।
গত মে মাসে কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার লক্ষ্যে নতুন একটি চুক্তি করা হবে।
তবে দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা এখনো বিরাজমান। প্রায় ৪৫ বছর আগে ১৯৭৯ সালে তেহরানে মার্কিন দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণ দখলের পর ৪৪৪ দিনব্যাপী জিম্মি সংকটের জন্ম হয়েছিল। সেই বিপ্লবের আগে ইরানি রিয়াল এখনকার তুলনায় বেশ শক্তিশালী ছিল। প্রতি ডলারে তখন ৭০ রিয়াল পাওয়া যেত।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এখন যে সংঘাত, তাতে গভীরভাবে জড়িয়ে গেছে ইরান। পুরো অঞ্চল এই সংঘাতে ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। তেহরান যাকে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষ হিসেবে বর্ণনা করে, সেই মিত্ররা আজ রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী ও যোদ্ধার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি হামাস, লেবাননের হেজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।