নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে সৌদি আরামকো
সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি গত বছর ১৬ হাজার ১১০ কোটি মার্কিন ডলার মুনাফা করেছে। লাভের এ অঙ্ক তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। এক বছর আগে আরামকো যে পরিমাণ মুনাফা করেছিল, গত বছরের মুনাফা ছিল তার চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এ বিপুল মুনাফা এসেছে জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য, আগের তুলনায় বেশি তেল বিক্রি এবং পরিশোধিত তেলে আরও বেশি লাভ করার কারণে।আরামকোর মতো গত বছর বিপুল মুনাফা করেছে বিশ্বের অন্যান্য বড় তেল কোম্পানি, যেমন বিপি, শেল, এক্সনমোবিল ও শেভরন।
গত ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া রিপোর্টে দেখা যায়, আরামকো বাদে বিশ্বের বড় ৬টি জ্বালানি তেল কোম্পানি ২০২২ সালে সব মিলিয়ে মুনাফা করে ২১ হাজার ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানি তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লাভ করে ওই বছর। তবে এ সময়ে পৃথিবীর প্রায় সব মানুষকেই উচ্চ মূল্যে জ্বালানি কিনতে হয়।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ভূরাজনৈতিক উদ্বেগের মধ্যে তেলের দাম দারুণভাবে বেড়ে যায়। তবে সবচেয়ে বেশি তেল যে দেশ আমদানি করে, সেই চীনে তেলের চাহিদা কম এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার কারণে এরপর তেলের দাম খানিকটা পড়ে যায়।
আরামকোর প্রধান নির্বাহী আমির নাসের মুনাফার কথা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা মনে করি, তেল ও গ্যাস অনুমেয় ভবিষ্যৎ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পণ্য হিসেবে থাকবে। কিন্তু সেই তুলনায় এ খাতে খুব কম বিনিয়োগ যে ঝুঁকি তৈরি করছে, সেটি এখন বাস্তব। আর এর কারণে তেলের দামও বাড়ছে।’
আমির নাসের বলেন, ওই ঝুঁকি প্রশমিত করতে আরামকো যে শুধু তেল, গ্যাস ও কেমিক্যালসের উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগ দিচ্ছে, তা-ই নয়, একই সঙ্গে তারা স্বল্প কার্বন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে, যাতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা যায়।
২০২২ সালে আরামকোর মূলধনি ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার। চলতি বছরে বাইরের বিনিয়োগসহ কোম্পানির খরচ ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মধ্যে থাকবে বলে সৌদি কোম্পানিটি আশা করছে।
গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের জন্য আরামকো ১ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগের প্রান্তিকের চেয়ে এটি ৪ শতাংশ বেশি। কোম্পানির পর্ষদ বোনাস শেয়ার দেওয়ার জন্যও সুপারিশ করেছে। অনুমোদিত হলে প্রতি ১০টি শেয়ারের জন্য একটি বোনাস শেয়ার দেওয়া হবে।
আরামকোর অর্থ সরবরাহ বেড়ে রেকর্ড ১৪ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর গত বছরের মার্চ থেকে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে।
সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, এ আশঙ্কায় তেলের দাম বাড়ে। ২০০৮ সালের পর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তখন প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেল বিক্রি হয় ১৩৯ দশমিক ১৩ ডলারে।
তবে ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়ানো পর অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে উদ্বেগ শুরু হলে তেলের দাম আবার কমে আসে।