২৭ বছর পর পদত্যাগ করছেন কাতার এয়ারওয়েজের সিইও আকবর আল বাকের

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় বিমান পরিবহন সংস্থা কাতার এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চলেছেন আকবর আল বাকের। প্রায় তিন দশক ধরে কাতারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই বিমান সংস্থার প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

১৯৯৭ সাল থেকে কাতার এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহীর পদে রয়েছেন আল বাকের। বিশ্বে উড়োজাহাজ পরিবহন খাতের অন্যতম স্পষ্টভাষী ও প্রভাবশালী নেতা মনে করা হয় তাঁকে। আগামী ৫ নভেম্বর তিনি বিমান কোম্পানিটি থেকে পদত্যাগ করবেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, আল বাকেরের পদত্যাগের ঘোষণা একটি দাপ্তরিক চিঠির মাধ্যমে কর্মীদের জানানো হয়েছিল। চিঠিতে কাতার এয়ারওয়েজে আল বাকেরের ২৭ বছরের ‘অসাধারণ সেবার’ কথা স্মরণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাদ শেরিদা আল-কাবি। তবে এ বিষয়ে কোম্পানির আনুষ্ঠানিক মন্তব্য জানতে পারেনি রয়টার্স।

অন্যদিকে সিএনএন বলছে, আল বাকেরের এমন পদক্ষেপ অপ্রত্যাশিত ছিল। এ ছাড়া কাতার এয়ারওয়েজও তার প্রস্থানের জন্য কোনো কারণ জানায়নি।

কাতার এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, প্রধান নির্বাহী পদে আল বাকেরের স্থলাভিষিক্ত হবেন বদর মোহাম্মদ আল মীর, যিনি বর্তমানে রাজধানী দোহায় অবস্থিত হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কাতার এয়ারওয়েজ ঘাঁটি হিসেবে দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ব্যবহার করে।

১৯৯৪ সালে কাতার এয়ারওয়েজের যাত্রা শুরু হয়। এর তিন বছর পর বিমান সংস্থাটির সিইও নিযুক্ত হন আল বাকের। দায়িত্ব পালনের সময় কাতার এয়ারওয়েজকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। বর্তমানে দুবাইয়ের এমিরেটস বা টার্কিশ এয়ারলাইনসের মতো বিমান সংস্থার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে কাতার এয়ারওয়েজ।

বলা হয়ে থাকে, বৈশ্বিক বিমান চালনার মানচিত্রকে মধ্যপ্রাচ্যমুখী করেছেন আকবর আল বাকের। সিইও হিসেবে ২৭ বছরের মেয়াদে তিনি দোহার হামাদ বিমানবন্দরে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এর ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট কেন্দ্রে পরিণত হয় বিমানবন্দরটি।

এ ছাড়া কাতার এয়ারওয়েজের বহরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত বিমানের সংখ্যা বাড়াতেও কাজ করেছেন তিনি। এসব কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিমান পরিবহন বলতেই আল বাকেরের নাম সবার আগে চলে আসে। আল বাকের বর্তমানে হামাদ বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

আকবর আল বাকের প্রায়ই বিমান পরিবহন বিষয়ে তাঁর স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বিতর্কের মুখোমুখি হন। যেমন ২০১৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভায় যৌন বিভাজক মন্তব্য করার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। ওই সভায় বিমান পরিবহনশিল্পে লিঙ্গবৈষম্য সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে আল বাকের বলেছিলেন, অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্যের বিমান পরিবহন কোম্পানির নেতৃত্বে একজন পুরুষ থাকতে হবে। কারণ, এটি একটি খুব চ্যালেঞ্জিং অবস্থান।

এ মন্তব্যের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে আকবর আল বাকের একটি বিবৃতিতে অনুশোচনা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি যদি একজন মহিলা প্রার্থীকে কাতার এয়ারওয়েজের পরবর্তী সিইও হতে সাহায্য করতে পারি, তাহলে এটা আমার জন্য আনন্দের হবে।’