বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে কিছুটা, ঘূর্ণিঝড় ফ্রান্সিনের প্রভাব
সোমবারের ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে আঘাত হানা হারিকেন ফ্রান্সিনের প্রভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুত নিয়ে শঙ্কার কারণে আজ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আজ ১৬ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেলপ্রতি ৭২ দশমিক ৯১ ডলারে উঠেছে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের আরেক মানদণ্ড ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৩৪ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭০ দশমিক ৪৩ ডলারে উঠেছে।
এর আগে গতকাল সোমবারও এই উভয় ব্র্যান্ডের তেলের দাম বেড়েছিল। মূলত ঘূর্ণিঝড় ফ্রান্সিনের কারণে মেক্সিকো উপসাগর অঞ্চলে তেলের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে চীনের চাহিদা হ্রাস নিয়ে যে শঙ্কা আগে থেকেই বাজারে আছে, তাকে ছাপিয়ে গেছে এই সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ শিগগিরই নীতি সুদ কমাতে যাচ্ছে। বাজারে সেই সম্ভাব্য ঘোষণার প্রভাবও পড়েছে।
ইউএস ব্যুরো অব সেফটি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এনফোর্সমেন্ট সোমবার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মেক্সিকো উপসাগরে ১২ শতাংশ অপরিশোধিত তেল ও ১৬ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
তবে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। নীতি সুদ কমলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদও কমবে। তখন বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এএনজেড অ্যানালিস্টের নোটে বলা হয়েছে, আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার কমানো হলে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের কারণেও বাজারে তেলের সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
এ ছাড়া রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, ১৩ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুত দুই লাখ ব্যারেল হ্রাস পেতে পারে। বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির পেছনে এটিও বড় কারণ।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক পেট্রোলিয়াম কনফারেন্সে (এপিপিইসি) বহুজাতিক কোম্পানি ট্রাফিগুরার তেল বিভাগের প্রধান বেন লাকক বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে জ্বালানি তেলের বাজারে রীতিমতো উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। শিগগির বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৬০ ডলারে নেমে যেতে পারে। এমনকি ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো উত্তোলন না বাড়ালেও বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হয়ে যেতে পারে।
কোভিড মহামারির সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের চাহিদা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ২০ ডলারে নেমে এসেছিল। এরপর তেলের দাম বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসেই তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারে নেমে আসে। তার পর থেকে তেলের দাম এর আশপাশেই ছিল। চলতি মাসে দাম আরও কমে গিয়ে ৭০ ডলারের নিচে নেমে যাওয়ার পর আবার কিছুটা বাড়ল।
বিশ্লেষকেরা বলেন, মূলত চাহিদা ও জোগানের ওপর যেকোনো পণ্যের দাম নির্ভর করে। কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে গেছে। ফলে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো তেলের উৎপাদন হ্রাস করেও দাম খুব একটা বাড়াতে পারছে না, বরং চলতি বছর দাম আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এখন যে দুদিন ধরে দাম কিছুটা বাড়ছে, তা সাময়িক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।