মূল্যস্ফীতির প্রভাব অনুভব করছেন না মার্কিনিরা: জরিপের ফল
গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার গত আগস্ট মাসে বেড়েছে। তবে ভোক্তাদের মনোভাবের ওপর মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ক্রেতাদের মধ্যে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব এখনো পড়েনি।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত জরিপের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা আশা করছেন যে চলতি সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ৩ দশমিক ১-এ নেমে আসবে, আগস্টে যা ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ফলে যে মূল্যস্ফীতির হার মহামারির আগে ২ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ১-এর মধ্যে ছিল, আবারও তা আগের সেই মাত্রার কাছাকাছি চলে যাবে। খবর সিএনএনের
এ ছাড়া আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার ২ দশমিক ৭-এ নেমে আসবে বলে আশা করছেন দেশটির ভোক্তারা। অর্থাৎ এখন আর তাঁরা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কথা ভাবছেন না।
ভোক্তাদের এই মনোভাব ফেডারেল রিজার্ভের জন্য স্বস্তিকর। তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ে মার্কিন নাগরিকদের মনোভাব ও প্রত্যাশা পর্যবেক্ষণ করছে। মার্কিনদের আত্মবিশ্বাস, অতীতে মূল্যস্ফীতির হার যে পর্যায়ে ছিল, ভবিষ্যতে আবারও সেই পর্যায়ে যাবে। তবে ভোক্তারা উচ্চ মূল্যের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ফেডের পক্ষে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের লড়াই চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান প্যানথেয়ন ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়ান শেফার্ডসন এক নোটে লিখেছেন, ‘আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে মূল্যস্ফীতির হার কমবে, মানুষের মধ্যে এই প্রত্যাশা তৈরি হওয়াটা প্রকৃত অর্থেই খুব ভালো বিষয়। এটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ। প্যানথেয়নের পক্ষ থেকেও আমরা বলে আসছিলাম, মানুষের মধ্যে এই ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হওয়ার কথা।’
শেফার্ডসনের সতর্কবার্তা, এই পরিসংখ্যান প্রাথমিক; গ্যাসের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতির এই প্রত্যাশিত হার বাড়তে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বিষয়টি ভালোই দেখাচ্ছে।
মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে দৃশ্যমান সূচকের মধ্যে একটি হচ্ছে গ্যাসের মূল্য। দাম বাড়লে মানুষের মধ্যে সহজে তিক্ততাও সৃষ্টি হতে পারে। গত বছর গ্রীষ্মে যখন মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠল এবং গ্যাসের দাম গ্যালনপ্রতি ৫ ডলার ছাড়িয়ে গেল, তখন মানুষের মনোভাব সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিনের গড় দাম ছিল গ্যালনপ্রতি ৩ দশমিক ৮৭ সেন্ট, যা এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ৭ সেন্ট বেশি এবং এক বছর আগের একই দিনের তুলনায় ১৭ সেন্ট বেশি।
তবে অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে সেপ্টেম্বর মাসে ভোক্তাদের মনোভাব কিছুটা নিম্নমুখী, আগের মাসের তুলনায় যা ১ দশমিক ৮ পয়েন্ট কম। জরিপে অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি-সংক্রান্ত সূচকের মানও এক মাসে অনেকটা কমেছে, আগস্ট মাসে যা ছিল ৭৫ দশমিক ৭; চলতি মাসে তা ৬৯ দশমিক ৮-এ নেমে এসেছে।
সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দেশটির নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হলেও ভোক্তারা ঠিক আশাবাদী নন। সরকারি ব্যয় পরিকল্পনা কংগ্রেসে পাস হবে না, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, ভোক্তারা অর্থনীতির সামগ্রিক গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে কিছুটা সতর্ক। এখন অনেকেই ব্যয় পরিকল্পনা পাস না হওয়ার বিষয়ে সতর্ক। তবে প্রকৃত অর্থেই যদি তা না হয়, তাহলে অর্থনীতি সম্পর্কে মানুষের মনোভাব আরও নিম্নমুখী হবে। মে মাসেও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যখন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ব্যয়সীমা বৃদ্ধি বা স্থগিত নিয়ে কংগ্রেসে একধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়।