সারা বিশ্বেই বেড়েছে খাদ্যের দাম, এফএওর সূচক ১৮ মাসে সর্বোচ্চ
অক্টোবর মাসে সারা বিশ্বেই খাদ্যের দাম বেড়েছে। ফলে গত মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি (এফএও) সংস্থার প্রণীত খাদ্যমূল্যসূচক ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে উদ্ভিজ্জ তেলের দাম। যে পাঁচটি খাদ্যের দামের ভিত্তিতে এফএও এই সূচক প্রণয়ন করে, তার মধ্যে মাংস ছাড়া সব খাদ্যের দামই গত মাসে বেড়েছে।
অক্টোবর মাসে এফএওর খাদ্যমূলসূচক ছিল ১২৭ দশমিক ৪ পয়েন্ট। জুলাইয়ের পর টানা তিন মাস এই সূচক বেড়েছে। মাংস, দুগ্ধজাত খাদ্য, শস্য, উদ্ভিজ্জ তেল ও চিনির দামের ভিত্তিতে এই সূচক প্রণয়ন করা হয়।
দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে মাংসের মূল্যসূচক ছিল ১২০ দশমিক ৮ পয়েন্ট, অক্টোবর মাসে তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১২০ দশমিক ৪ পয়েন্ট। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে দুগ্ধজাত খাদ্যের সূচক ছিল ১৩৬ দশমিক ৫ পয়েন্ট, অক্টোবর মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৯ দশমিক ১ পয়েন্ট।
সেপ্টেম্বর মাসে শস্যজাতীয় খাদ্যের সূচক ছিল ১১৩ দশমিক ৬ পয়েন্ট, অক্টোবর মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট। সেপ্টেম্বর মাসে উদ্ভিজ্জ তেলের মূল্যসূচক ছিল ১৪২ দশমিক ৪ পয়েন্ট, অক্টোবর মাসে তা একধাপে ১০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে ১৫২ দশমিক ৭ পয়েন্ট উঠেছে। সেপ্টেম্বর মাসে চিনির মূল্যসূচক ছিল ১২৬ দশমিক ৩ পয়েন্ট, অক্টোবর মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৯ দশমিক ৬ পয়েন্ট।
২০২০ সালে এফএওর গড় খাদ্যমূল্যসূচক ছিল ৯৮ দশমিক ১ পয়েন্ট। ২০২১ ও ২০২২ সালে তা অনেকটা বেড়ে যায়। ২০২১ সালে এই সূচকের মান দাঁড়ায় ১২৫ দশমিক ৭ পয়েন্ট। ২০২২ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৪ দশমিক ৫ পয়েন্ট। সেবার মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যসূচক অনেকটা বেড়ে যায়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। বিশেষ করে খাদ্যমূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের দুর্দশার অন্ত ছিল না।
এরপর মূল্যসূচক আবার কমেছে। ২০২৩ সালে এই সূচকের মান দাঁড়ায় ১২৪ দশমিক ৫ পয়েন্ট। চলতি বছর এই সূচকের সর্বনিম্ন মান ছিল ফেব্রুয়ারিতে ১১৭ দশমিক ৪ পয়েন্ট; সর্বোচ্চ গত অক্টোবর মাসে ১২৭ দশমিক ৪ পয়েন্ট।
অক্টোবর মাসে বিশ্ববাজারে উদ্ভিজ্জ তেলের দাম ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে এর দাম এখন দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাম, সয়াবিন, সূর্যমুখী—সব ধরনের উদ্ভিজ্জ তেলের দাম বেড়েছে। মূলত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় এসব তেলের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং এগুলোর বিকল্প কিছু না থাকায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে এফএও।
অক্টোবর মাসে বিশ্ববাজারে শস্যজাতীয় খাবারের দাম শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বৃহৎ গম উৎপাদনকারী দেশগুলোয় গমের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও রাশিয়ার মূল্য নিয়ন্ত্রণের কারণেও গমের দামে প্রভাব পড়েছে। ব্রাজিলে চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং আর্জেন্টিনায় চাষাবাদে দেরি হওয়ায় ভুট্টার দাম বেড়েছে।
এফএও আরও বলেছে, ভারত চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করায় গত মাসে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে। চালের মূল্যসূচক কমেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
গত মাসে মাংসের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এফএও বলছে, চাহিদা কমে যাওয়া ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে পোলট্রি মুরগি ও শূকরের মাংসের দাম কমেছে। সূচকেও তার প্রভাব পড়েছে।
এদিকে অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কয়েক দফায় নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে সে দেশেও খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমছে।