বিশ্বের প্রথম লাখ কোটিপতি হওয়ার পথে ইলন মাস্ক

ইলন মাস্কফাইল ছবি: এএফপি

বৈদ্যুতিক যানবাহন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে মহাকাশ, রকেট, এমনকি ক্ষুদ্রাকৃতির মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন—এমন কিছু নিয়েই গড়ে উঠেছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, এ সবকিছুর বদৌলতে ইলন মাস্ক শিগগিরই বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার বা লাখ কোটিপতি হতে পারেন।

একদিকে ব্যবসায়িক সফলতা, আরেক দিকে সেই সফলতার বদৌলতে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের একজন ইলন মাস্ক। নানা ধরনের খ্যাপাটে কর্মকাণ্ডের জন্য যিনি প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনাম হন। বিশ্বের এই শীর্ষ ধনী ইতিমধ্যে ২৫০ বিলিয়ন বা ২৫ হাজার কোটি ডলারের মালিক।

বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা ইনফরমা কানেক্ট একাডেমি বলছে, ২০২৭ সালের মধ্যে তিনি ট্রিলিয়নিয়ার এক লাখ কোটি ডলারের মালিক হতে পারেন; সেই পথেই এগোচ্ছেন তিনি।

ইনফর্মা আরও বলেছে, মাস্কের সম্পদমূল্য প্রতিবছর গড়ে ১১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এই হারে বা তার কাছাকাছি হারেও মাস্কের সম্পদমূল্য বৃদ্ধি পেলে তিনিই যে বিশ্বের প্রথম লাখ কোটিপতি হবেন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

যদিও এ ক্ষেত্রে যে মাস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তা নয়। ইনফরমার তথ্যানুসারে, বিশ্বের অন্যতম দামি কোম্পানি এনভিডিয়ার সিইও বা প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং ২০২৮ সালের মধ্যে ট্রিলিয়নিয়ার বা লাখ কোটিপতি হতে পারেন। ব্লুমবার্গের তথ্যানুসারে, এনভিডিয়ার সিইও ও সহপ্রতিষ্ঠাতা হুয়াংয়ের সম্পদমূল্য এখন ১০৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

বিষয়টি হলো, এখন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে, তা সম্ভব হচ্ছে এনভিডিয়ার উচ্চমানের চিপের কল্যাণে। কিছুদিন আগেই বাজার মূলধনের দিক থেকে এনভিডিয়া বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানি হয়। কোম্পানির বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে হুয়াংয়ের সম্পদমূল্যও উল্কার গতিতে বাড়ছে। ফলে তিনিও শত কোটিপতি হওয়ার প্রতিযোগিতায় আছেন বলে মনে করছে ইনফরমা।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানিও ২০২৮ সালের মধ্যে লাখ কোটিপতি হওয়ার পথে আছেন।

মাস্কের লাখ কোটিপতি হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে মূলত তাঁর সবচেয়ে পয়মন্ত কোম্পানি টেসলার ওপর; এই টেসলা দিয়েই মূলত তাঁর পরিচিত গড়ে উঠেছে। মাস্কের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি এখন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান অটো কোম্পানি; যার বাজারমূল্য প্রায় ৭১০ বিলিয়ন বা ৭১ হাজার কোটি ডলার। এটি কোকাকোলা, ব্যাংক অব আমেরিকা ও বোয়িংয়ের চেয়েও মূল্যবান। টেসলার ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক ইলন মাস্ক। ফলে তাঁর টেসলার শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৯৩ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

এ ছাড়া মাস্ক টেসলার আরও ৩০ কোটি ৩০ লাখ বিকল্প স্টকের মালিক। বিষয়টি তাঁর সেই বিতর্কিত বেতন-ভাতার সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রথমে আদালত তা অনুমোদন না করলেও পরবর্তীকালে শেয়ারহোল্ডাররা তা অনুমোদন করেছেন। টেসলার বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে মাস্কের সম্পদমূল্য এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হতে সময় লাগবে না।

ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের সিনিয়র ইক্যুইটি বিশ্লেষক ড্যান ইভস এক ই–মেইলে সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে টেসলা, রোবোটিকস ও ইভির ভবিষ্যৎকে পুঁজি করে ভবিষ্যতে ইলন মাস্ক নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন; সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।’

তবে টেসলার গতিপথ একদম মসৃণ ছিল না। টেসলাকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছে। এখন তারা চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানিগুলোর তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে। এ ছাড়া ২০২২ সালে কোম্পানির স্টক মূল্য এক-তৃতীয়াংশ স্টক কমে যাওয়ার কারণে তাদের অনেক লড়াই করতে হয়েছে।

এমনকি ২০০৮ সালে টেসলার প্রায় দেউলিয়া হওয়ার অবস্থা হয়েছিল। আর দু-এক দিন গেলেই দেউলিয়াত্বের আবেদন কতে হতো, যদিও শেষ মুহূর্তে এক ঋণের কল্যাণে টেসলা সুরক্ষিত হয়।