অ্যালকোহলের বাজার বড় হচ্ছে ভারতে, বিশ্বে স্থান পঞ্চম

ভারত

ভারতে অ্যালকোহলভিত্তিক বেভারেজ বা পানীয়ের বাজার বড় হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল স্পিরিটিস অ্যান্ড ওয়াইনস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ভারতে এই অ্যালকোহলভিত্তিক পানীয়ের বাজারের আকার ছিল ৫২ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ২৪০ কোটি ডলার। আগামী পাঁচ বছরে মদের এ বাজার অনেকটাই বাড়বে।

ভারতের নীতি আয়োগের প্রধান নির্বাহী অমিতাভ কান্ট এই প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেছেন বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। প্রতিবেদনে অ্যালকোহল খাতের বিভিন্ন দিক বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। অ্যালকোহল পান, তার অর্থনৈতিক গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে তার প্রভাব—সবই তুলে ধরা হয়েছে এতে।

ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির নিরিখে হিসাব করা হলে দেখা যায়, বর্তমান দামের নিরিখে অ্যালকোহলভিত্তিক পানীয়ের হিস্যা মোট জিডিপির ২ শতাংশ। ভারতীয় মুদ্রায় এর আকার দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৯ লাখ কোটি রুপি, যার মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পানীয়ও আছে।

ওয়াইনস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনের পূর্বাভাস, ভারতে এই পানীয়ের বাজার আরও বড় হবে।

আগামী পাঁচ বছরে এই বাজারের আকার ৬৪ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। এতে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে অ্যালকোহলভিত্তিক পানীয়ের বৈশ্বিক বাজারে ভারতের পঞ্চম স্থান আরও পাকাপোক্ত হবে।

২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের এই অ্যালকোহলভিত্তিক বেভারেজ শিল্প বিভিন্ন রাজ্যের কোষাগারে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি রুপি পরোক্ষ কর জমা দিয়েছে। শুধু কাস্টমস শুল্ক হিসেবে এই শিল্প থেকে এসেছে ২ হাজার ৪০ কোটি রুপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অ্যালকোহলভিত্তিক পানীয় থেকে যে কর আয় হয়, তা ভারতের মোট করের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং দেশটির পরোক্ষ করের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ।

ভারতের রাজ্য সরকারগুলো যে কর রাজস্ব আয় করে, তার ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ আসে অ্যালকোহল খাত থেকে।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য অমিতাভ কান্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ওয়াইন অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী নীতা কাপুর। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের সংগঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; জাতিকে দেখাতে পেরেছি, আমরা কতটা প্রাসঙ্গিক। সময় এসেছে, সবাইকে এখন আমাদের খাতের গুরুত্ব স্বীকার করতে হবে।’

নীতা কাপুর আরও বলেন, দেশের অর্থনীতিতে অ্যালকোহল গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ খাতে আরও প্রবৃদ্ধির সুযোগ আছে। এখানে যেমন আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে, তেমনি আরও রাজস্ব আহরণেরও সুযোগ আছে। এই পরিস্থিতিতে এ খাতের পূর্ণাঙ্গ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান সরলীকরণের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের প্রায় ৭ লাখ ২৪ হাজার ৬১১টি খামার ও ৩৬ লাখ ২৩ হাজার ৫৭ কৃষক এই অ্যালকোহল শিল্পের জন্য শস্য উৎপাদনে জড়িত আছে। দেশটির কৃষি, শিকার, বনায়ন ও মৎস্য খাতে যত মানুষ জড়িত, তাদের প্রায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওয়াইন উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৭৯ লাখ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আছে। এ খাতের রপ্তানি সম্ভাবনাও অন্যান্য খাতের মতো, তবে সে জন্য প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা প্রয়োজন।

ওয়াইন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সুরেশ মেনন টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, রাজস্ব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি কৃষকদের জীবিকা অর্জনে এ খাত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। একই সঙ্গে এ খাত হোটেল, পর্যটন, খাদ্য ও পানীয় খাতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

ভারতে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। এ কারণে আগামী আরও কয়েক দশক মধ্যবিত্ত শ্রেণির আকারও বাড়বে, স্বাভাবিকভাবেই দেশটিতে বাড়বে মাথাপিছু ভোগ। সে জন্য যথাযথ নীতিসহায়তা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, দেশটিতে বিয়ার, ভদকা ও রামের মতো অ্যালকোহল বা মদ বিক্রি হয়। তবে সেখানকার অ্যালকোহলপ্রেমীদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের পানীয় হলো হুইস্কি। বিশ্বে মোট উৎপাদিত হুইস্কির প্রায় ৫০ শতাংশ ভারতীয়রা সেবন করে থাকেন। হুইস্কিরই অন্যতম ধরন হলো স্কচ, যার বিক্রি প্রতিবছরই ভারতে বাড়ছে।