টুইটার কেনার পর ৮০ শতাংশ কর্মীই ছাঁটাই করেছেন ইলন মাস্ক

টুইটার

ইলন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের মালিক হওয়ার পর কোম্পানিটি থেকে ছয় হাজারের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক বিরল সাক্ষাৎকারে ইলন মাস্ক এ কথা জানান বলে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ওই সাক্ষাৎকারে মাস্ক জানান, টুইটারে এখন মাত্র ১ হাজার ৫০০ কর্মী কাজ করেন। তিনি যখন টুইটার কেনেন, তখন কোম্পানিতে আট হাজারের কিছু কম কর্মী কাজ করতেন। অর্থাৎ তাঁর মালিকানায় আসার পর টুইটারের ৮০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে।

ইলন মাস্ক নিজে একজন বিলিওনিয়ার বা শতকোটিপতি। টুইটারের সান ফ্রান্সিসকো সদর দপ্তরে বসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে এত মানুষকে ছাঁটাই করা ‘মজার কোনো ব্যাপার’ ছিল না; বরং এ ধরনের কাজ কখনো কখনো ‘বেদনাদায়ক’ হতে পারে।

ইলন মাস্ক বলেন, তিনি টুইটার কেনার পর এ ধরনের একটি ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়া দরকার ছিল। কারণ, তখন কোম্পানিতে যে ‘নেতিবাচক অর্থপ্রবাহ হচ্ছিল, তার পরিমাণ ছিল ৩০০ কোটি ডলার’। বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী এই ব্যবসায়ীর হিসাবে, ওই পরিস্থিতিতে টুইটার ‘আর মাত্র চার মাস’ টিকে থাকতে পারত।

ইলন মাস্ক বলেন, ‘এটা যত্নশীল হওয়া বা না হওয়ার মতো ব্যাপার নয়। এটা হলো এমন একটি পরিস্থিতি, যদি পুরো জাহাজ ডুবে যায়, তাহলে চাকরি করার মতো আর কেউ বেঁচে থাকবে না।’

গত অক্টোবরে মাস্ক ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার দামে টুইটার কেনেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে তিনি প্রথম কোম্পানিটি কেনার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। তবে টুইটারের অনেক যান্ত্রিক অ্যাকাউন্ট আছে, এমন উদ্বেগের কথা বলে তিনি তাঁর দেওয়া প্রস্তাব থেকে সরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিলেন।

তবে টুইটার কেনার পর তিনি কোম্পানিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। শীর্ষ পর্যায়ের নির্বাহীদের তিনি চাকরিচ্যুত করেন, কর্মিসংখ্যা কমান এবং ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট কীভাবে যাচাই করা হবে কিংবা চিহ্নিত হবে, সে ব্যাপারে নতুন নীতিমালা করেন।

এর পর থেকে টুইটার অর্থনৈতিক অবস্থা ‘মোটামুটি’ না লাভ না ক্ষতি পর্যায়ে এসেছে বলে তিনি সাক্ষাৎকারে দাবি করেন। তিনি আরও জানান, বিজ্ঞাপনদাতারা আবারও টুইটারে ফিরে আসছে।

বিবিসিকে সম্প্রতি টুইটার ‘সরকারি তহবিলে পরিচালিত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি এ ব্যাপারে আপত্তি তোলার পর ইলন মাস্ক এটা পরিবর্তন করে তাদের ‘জনগণের অর্থে পরিচালিত’ হিসেবে চিহ্নিত করতে প্রতিশ্রুতি দেন।

গত সপ্তাহান্তে বিবিসিকে এমনভাবে চিহ্নিত করা হয়। বিবিসি এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে বলে যে তারা ‘এখন এবং সব সময়ই স্বাধীন’। বিবিসি বলেছে, ‘ব্রিটিশ জনগণ লাইসেন্স ফি দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের তহবিল জোগায়।’

টিকটকের ব্যাপারে মার্কিন কর্তৃপক্ষ যে নজরদারি শুরু করেছে, সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ইলন মাস্ক বলেন যে তিনি চীনা অ্যাপ টিকটক ব্যবহার করেন না, তবে যেকোনো ‘জিনিস নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে’ তাঁর অবস্থান।

ইলন মাস্ক মজা করে বলেন, ‘আমি বলতে চাই, টিকটক নিষিদ্ধ করলে টুইটারের সুবিধা হবে। কারণ, মানুষ তখন আরও বেশি সময় ধরে টুইটার ব্যবহার করবে। কিন্তু টুইটারের সুবিধা হলেও আমি কোনো জিনিস নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে।’

সাক্ষাৎকারের সময় ইলন মাস্ক রসিকতাও করেন। তিনি বলেন যে তিনি ‘আর টুইটারের সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) নন’। বরং তাঁর জায়গা নিয়েছে একটি কুকুর, যার নাম ‘ফ্লকি’। এটি জাপানি শিবা ইনু ধরনের একটি কুকুর, যা তিনি পালন করেন।