জুলাই–সেপ্টেম্বরে চীনের প্রবৃদ্ধি কমেছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা

চীনফাইল ছবি: রয়টার্স

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের পর চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির গতি ছিল সবচেয়ে কম। যদিও দেশটি প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে সম্প্রতি আবার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছর দেশটির সরকার ‘প্রায় ৫ শতাংশ’ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

দেড় বছরের মধ্যে কোনো প্রান্তিকে এটি সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি হলেও বিশ্লেষকেরা আরও নিম্ন হারের প্রবৃদ্ধির আশঙ্কা করেছিলেন। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত অন্যান্য পরিসংখ্যানও পূর্বাভাসের চেয়ে ভালো এসেছে, যেমন খুচরা বিক্রয় ও কারখানার উৎপাদনও পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে।

সম্প্রতি বেইজিং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগাতে নতুন করে প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধির হার চলতি বছর চীনের ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার নিচেই থাকল। এবার নিয়ে টানা দ্বিতীয় প্রান্তিকে এমনটা ঘটল। এতে চীনের নীতি প্রণেতাদের উদ্বেগ আরও বাড়ল বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চীন বিভাগের সাবেক প্রধান ঈশ্বর প্রসাদ বলেন, চলতি বছরের জন্য সরকারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ফলে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চতুর্থ প্রান্তিকে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন হবে; দরকার হবে আরও প্রণোদনা।

এদিকে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস অ্যানালিটিকসের অর্থনীতিবিদ হ্যারি মারফি ক্রুজ কিছুটা আশাবাদী। বিবিসিকে তিনি বলেন, প্রণোদনার কল্যাণে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা আছে ঠিক; কিন্তু অর্থনীতির কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

সরকারি পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে নতুন বাড়ির দাম প্রায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে কমেছে। এর অর্থ হলো আবাসন খাতের মন্দা আরও গভীর হচ্ছে।

আইএনজি ব্যাংকের প্রধান ও চীনা অর্থনীতিবিদ লিন সং বলেছেন, আবাসন খাত চীনের প্রবৃদ্ধির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে; মূল্য স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এবং বাড়ির মজুত কমে না আসা পর্যন্ত নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধি সম্ভব নয়। সেই সময় পর্যন্ত আবাসন খাত প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে থাকবে।

এর আগে গতকাল চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বৈঠকে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণের প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

গত মাসে পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) মহামারির পর সবচেয়ে বড় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে; এর মধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদ ও বন্ধকের সুদহার কমানোও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পরিকল্পনায় দুর্বল স্টক মার্কেটকে সহায়তা করার কথা আছে। সেই সঙ্গে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি শ্রেণির ঋণগ্রহীতাদের ঋণ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।

এরপর চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলো আরও কয়েকটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। লক্ষ্য ও প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করা।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের অবস্থা কয়েক বছর ধরে ভালো নয়। দেশটির জিডিপির সবচেয়ে বড় খাত আবাসনের অবস্থা শোচনীয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে রপ্তানি কমেছে; সেই সঙ্গে দেশটির অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদাও কমেছে। এই বাস্তবতায় দেশটির সরকার প্রণোদনা দিয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।