আদানির মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নতুন আবেদন
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চলমান এক মামলায় নতুন কিছু নথি যোগ করার আরজি জানিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি নতুন আবেদন পেশ করা হয়েছে। ভারতীয় এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সে–সংক্রান্ত দুটি নথি মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদনটি করা হয়। আদানি গ্রুপের আর্থিক লেনদেন নিয়ে তদন্তসংক্রান্ত এই মামলা এখন বিচারাধীন রয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, বিশাল তিওয়ারি নামের এক আইনজীবী গতকাল শনিবার রাতে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে আবেদনটি পেশ করেন।
যে দুটি নথি মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে, তার প্রথমটি মার্কিন আদালতে পেশ করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র যাতে গৌতম আদানি, তাঁর আত্মীয় সাগর আদানি এবং অন্য নির্বাহীদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ভারতে শত শত কোটি ডলার মূল্যের সৌর জ্বালানিসংক্রান্ত কাজ পেতে বড় অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়েছে। কাজটা পেলে আদানির ২০০ কোটি ডলারের বেশি মুনাফা হতো।
অভিযোগ আরও বলা হয়েছে, এ–সংক্রান্ত চুক্তি করতে আদানি গ্রুপ ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৫ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ঘুষ দিয়েছে
বিশাল তিওয়ারি দ্বিতীয় যে নথি আদালতের বিবেচনায় নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন, সেটি মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) একটি অভিযোগনামা। এতে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এসইসি বলেছে, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থ সংগ্রহের জন্য আদানি গ্রুপের নির্বাহীরা বিনিয়োগকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। কিছু পুঁজির সঙ্গে দুর্নীতির সংযোগ রয়েছে, এটা জেনেও তাঁরা এ কাজ করেছেন।
আদানির নির্বাহীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রকাশ করা হয় গত বুধবার। মার্কিন অ্যাটর্নির কার্যালয়ের ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ পেতে কোম্পানিটি যে ঘুষ দিয়েছে, ওই নির্বাহীরা হলেন তার পেছনের মূল ব্যক্তি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আদানি গোষ্ঠী ও তাদের সহযোগীরা ২০২১ সালের জুলাই ও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানার বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে সোলার এনার্জি করপোরেশ অব ইন্ডিয়ার (এসইসিআই) সঙ্গে তাদের সরবরাহ চুক্তি হয়।
আদালতে পেশ করা আবেদনে বলা হয়, এসব চুক্তির ফলে পরবর্তী ২ দশকে আনুমানিক ২০০ কোটি ডলার মুনাফা হতে পারে।
মার্কিন অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ঘুষের বিষয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতির ভিত্তিতে পুঁজি উত্তোলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের প্রতারণা করতে আদানি গোষ্ঠীর নির্বাহীরা ষড়যন্ত্র করেছেন। বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যাঁরা মার্কিন পুঁজিবাজারসংক্রান্ত বিভিন্ন মার্কিন আইন ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ এনে মার্কিন শর্টসেলার প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ ২০২৩ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেই প্রতিবেদনের জের ধরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ বোর্ড (সেবি) বড় পরিসরে একটি তদন্ত করছে। সেই তদন্তের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আদানিদের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ এল।
আদালতে পেশ করা আবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন আইনি নথিতে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত জোরদার করতে পারে।