আবারও কর্মী ছাঁটাই করবে মেটা

মেটা
ছবি: ফেসবুক

বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের মচ্ছব যেন শেষ হচ্ছে না। জানা গেছে, ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা ইনকরপোরেটেড (META. O) আবারও ছাঁটাইয়ের দিকে যাচ্ছে। এর আগে এক দফা তারা কর্মী ছাঁটাই করেছে।

নতুন করে কর্মী ছাঁটাই করবে বলে কোম্পানির একাধিক দলের বাজেট চূড়ান্ত করতে বিলম্ব করছে মেটা, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সূত্রে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। তারা আরও বলেছে, কয়েক সপ্তাহ ধরেই মেটায় একধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। সে জন্য বাজেট চূড়ান্ত করতে বিলম্ব হচ্ছে। মেটা অবশ্য দাপ্তরিক সময়ের বাইরে এ বিষয়ে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলতে চায়নি।

এর আগে চলতি ২০২৩ সালকে দক্ষতার বছর হিসেবে আখ্যা দেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। মেটা জানায়, চলতি বছর তাদের ব্যয় ৮৯ থেকে ৯৫ বিলিয়ন অর্থাৎ ৮ হাজার ৯০০ কোটি থেকে ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মধ্যে থাকবে।
গত বছরের নভেম্বরে ১৩ শতাংশ বা ১১ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে মেটা। অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের পথ ধরে তারাও ছাঁটাইয়ের মচ্ছবে যোগ দেয়। তবে এবার ঠিক কত কর্মী ছাঁটাই হতে পারেন, তা জানা যায়নি।

কর্মীর আধিক্য ও মহামারির প্রভাব
মহামারির সময় বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘর থেকে কাজ করেছেন। ফলে প্রযুক্তির চাহিদা হঠাৎ করে বহুগুণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বিপুল কর্মী নিয়োগ দিয়েছে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি। তখন তাদের মুনাফাও হয়েছে বিপুল। কিন্তু এখন চাহিদা কমে যাওয়ায় কর্মীদের বিদায় করা হচ্ছে।

ঋণমান নির্ণয়কারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ফিচ রেটিংসের মার্কিন আঞ্চলিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ওলু সিনোলা সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের হার মহামারির আগের সময়ের তুলনায় এখনো ৮ শতাংশ বেশি। এর অর্থ হলো, ২০২১ ও ২০২২ সালে প্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে ২০২২ সালে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেড়ে যায়। একপর্যায়ে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যায় মূল্যস্ফীতি, তা মোকাবিলায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ গত বছর থেকে এ পর্যন্ত মোট আটবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে একদিকে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয় বেড়েছে; অন্যদিকে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে ঋণের সুদহারও বেড়ে গেছে। এতে অন্যান্য খাতের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর পক্ষেও ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে গেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লড়াই
কয়েক দিন আগেই খবর এল, তুমুল জনপ্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটিতে মাইক্রোসফট এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এটাই প্রথম নয়, এর আগেও তারা সেখানে বিনিয়োগ করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই চ্যাটজিপিটি গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবসা ধসিয়ে দেবে।

তবে গুগলও বসে নেই, তারাও সম্প্রতি বার্ড নামে পরীক্ষামূলক একটি চ্যাটবট নিয়ে এসেছে। কিন্তু বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, একটি প্রচারণামূলক ভিডিওতে গুগলের নতুন চ্যাটবট ‘বার্ড’কে একটি সহজ প্রশ্ন করা হলে তা ভুল উত্তর দেয়। এতে গুগলের প্রচারণা ব্যর্থ হয় এবং তারা রাতারাতি পুঁজিবাজারে ১০০ বিলিয়ন ডলার হারায়।

এ দুই উদাহরণ দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটা জনপ্রিয় ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, তা তুলে ধরা। ব্যবসা বিশ্লেষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিবি ইনসাইটের তথ্যানুসারে, এআইভিত্তিক স্টার্টআপগুলো গত বছর ৩০ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৬০ কোটি ডলার অর্থায়ন পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে স্বাস্থ্য খাত ও ফিনটেকে।

বাস্তবতা হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের চেনা পৃথিবী বদলে দিচ্ছে। চ্যাটজিপিটির কারণে কপিরাইটিং ও বিজ্ঞাপনের জগতে কাজ করা অনেক মানুষের কাজ কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন যাঁরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রাফিকসসহ নানা ধরনের কাজ করছেন, তাঁরাও চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন।

ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে নিজেদের অংশীদারি নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো উঠেপড়ে লেগেছে। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে সবাই। এই লড়াই ভবিষ্যতে আরও তীব্র হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আরও অনেক কর্মী ছাঁটাই হবেন। আবার অনেক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজেও অনেক মানুষের কাজ কেড়ে নেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।