রাশিয়ার সম্পদ জব্দের জের, ইউরোতে রাখা রিজার্ভ কমছে দেশে দেশে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরোপ্রতিকী ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইউরোর অংশীদারত্ব গত বছরে কমেছে। জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ ইউক্রেনের জন্য খরচ করা হতে পারে—এমন উদ্বেগের মধ্যে ইউরোর ওপর আস্থা কমে যাওয়ার মধ্যে এ ঘটনা ঘটল। এটা প্রমাণ করছে যে ইউরোপের এই একক মুদ্রার ব্যাপারে ধীরে ধীরে উদ্বেগ বাড়ছে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, গত বছর বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে ১০ হাজার কোটি ইউরো কমিয়ে ফেলেছে। এ সপ্তাহে প্রকাশিত ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় রিজার্ভে ইউরোর অংশীদারত্ব ৫ শতাংশ কমেছে।

এর ফলে বিশ্বব্যাপী রিজার্ভে ইউরোর অংশীদারত্ব দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

ইসিবি জানিয়েছে, সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড ও জাপান ইউরোভিত্তিক কিছু সম্পদ বিক্রি করেছে। এর উদ্দেশ্য নিজস্ব মুদ্রার পড়তি মান চাঙা করা। কিন্তু এ সময়ে তারা অন্যান্য মুদ্রা, যেমন মার্কিন ডলার কিংবা জাপানি ইয়েনে রাখা সম্পদ বিক্রি করেনি। বরং গত বছর এসব মুদ্রায় তারা সম্পদ বাড়িয়েছে।

রাশিয়া তার প্রায় ৪০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইউরোতে সংরক্ষণ করত। এই হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ইসিবি জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ইউরোতে যত রিজার্ভ সংরক্ষণ করা হয়েছে, তার ৮ শতাংশই ছিল রাশিয়ার মালিকানায়।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণ সামরিক অভিযান শুরু করার পর রাশিয়ার ৩০ হাজার কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় জব্দ করা হয়। পশ্চিমা দেশের জোট জি–৭-এর নেতারা এখন আলোচনা করছেন কীভাবে এই অর্থ ইউক্রেনের সাহায্যে ব্যবহার করা যায়। রাশিয়ার এই রিজার্ভের বড় অংশই ইউরোতে রাখা ছিল।

তবে ইসিবি মনে করছে, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান উত্তেজনা ইউরোর ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে। ইউরোপের এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত পদক্ষেপ সম্ভবত ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার অংশীদারত্বে ইউরোর অবস্থানে প্রভাব রাখবে।

দিন দুয়েক আগে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত এক চিঠিতে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টের বৈদেশিক ও ইউরোপীয় কমিটির প্রতিনিধিরা বিদেশে রাখা রাশিয়ার সব সম্পদ জব্দ করার জন্য বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। যেসব দেশের পার্লামেন্ট সদস্যরা চিঠিতে স্বাক্ষর করেন, সেসব দেশের মধ্যে রয়েছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত রাশিয়ার সমস্ত সম্পদ সম্পূর্ণভাবে জব্দ করা এবং তা ইউক্রেনে পাঠানো। তবে এই প্রক্রিয়া যেন আন্তর্জাতিক আইন মেনে করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’