মন্দার কবলে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি
মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর দর কমেছে আর তাতে নিশ্চিত হয়ে গেছে, ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানি মন্দার কবলে পড়েছে।
জার্মানির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চে জার্মানির অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। তার আগে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে দেশটির অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।
কোনো দেশের অর্থনীতি পরপর দুই ত্রৈমাসিকে হ্রাস পেলে বলা যায় সে দেশ মন্দার কবলে পেড়েছে। সেই সূত্র মেনেই জার্মানি মন্দার কবলে পড়েছে।
ডেনমার্কের ডনেস্ক ব্যাংকের গবেষক স্টেফান মেলিন বলেছেন, ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে সংকোচনের পর থেকেই ধীরে ধীরে মন্দার প্রভাব বাড়ছে জার্মানিতে। তখন থেকেই ছাঁটাইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। তবে শুধু ইউরো নয়, ইয়েনসহ বিশ্বের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রার দাম গত সপ্তাহে ডলারের তুলনায় কমেছে বলে জানান তিনি।
কোনো দেশের মন্দার কবলে পড়ার অর্থ হলো, সামগ্রিকভাবে সেই দেশের উৎপাদন হ্রাস পাওয়া—পণ্য ও সেবা উভয় ক্ষেত্রেই। ফলে অবধারিতভাবে বাড়ে বেকারত্ব, হ্রাস পায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা। সেই সঙ্গে এপ্রিল মাসের হিসাবে জার্মানির মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা ইউরো অঞ্চলের গড় হারের চেয়ে অনেকটাই বেশি। এতে পরিস্থিতি আরও সঙিন হয়ে পড়েছে।
এ পরিস্থিতির জন্য অনেকেই সামগ্রিকভাবে রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধকে দায়ী করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো জার্মানিও রাশিয়ার জ্বালানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে লাগামছাড়া বেড়েছে তেল ও গ্যাসের দাম, কিন্তু ঘাটতি মেটাতে গেলে রাশিয়ার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই।
জার্মান ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল এজেন্সি জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতিই এখন সবচেয়ে বড় শঙ্কার কারণ। মানুষের দৈনন্দিন খরচ অনেকটাই বেড়েছে। ফলে খাবার, পোশাক, আসবাব—সবকিছুতেই খরচ এক ধাক্কায় অনেকটা কমাতে বাধ্য হয়েছেন জার্মানরা, যার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। মূলত গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি এতটা বেড়েছে।
জার্মান ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল এজেন্সি চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য শূন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। এতে জার্মানি মন্দা এড়াতে পারবে, তেমনটাই ছিল তাদের পূর্বাভাস।
কিন্তু শেষমেশ তা হলো না। সংশোধিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বছরের প্রথম প্রান্তিকে পারিবারিক ব্যয় আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে।
অন্যদিকে প্রথম প্রান্তিকে জার্মানির সরকারি ব্যয় কমেছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সেই সঙ্গে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির জন্য সরকারি অনুদান প্রত্যাহারের পর গাড়ি বিক্রিও কমেছে।
তবে অনেক বিশ্লেষকই ভেবেছিলেন, মন্দা আরও তীব্র হবে। রাশিয়ার জ্বালানির ওপর জার্মানির অত্যধিক নির্ভরতার কারণে তাঁরা এমনটা ভেবেছিলেন। তবে গত শীতে তাপমাত্রার পারদ তেমন একটা না কমা এবং চীনের অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার কারণে মন্দা শেষমেশ অতটা তীব্র হয়নি।
মার্কিন ডলারের বাড়বাড়ন্ত
এদিকে ডলারের বাড়বাড়ন্ত চলছেই। যুক্তরাষ্ট্রের খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ডলার আবারও বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
ইউএস ডলার ইনডেক্সের তথ্যানুসারে, ইউরোর বিপরীতে মার্কিন ডলারের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় সূচকের মান উঠেছে ১০৪ দশমিক ১৬ পয়েন্টে, গত ১৭ মার্চের পর যা সর্বোচ্চ। ইউরোর দরপতন হয়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, ডলারের বিপরীতে যার মান এখন দুই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এক ইউরোর মান এখন ১ দশমিক শূন্য ৭ ডলার। সেই সঙ্গে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতেও ডলারের দর বেড়েছে।
এদিকে ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকেরা দেশটির জাতীয় ঋণের সীমা বাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্যে না আসতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান নেতিবাচক করার চিন্তা করছে তারা। কিন্তু এ পরিস্থিতিও ডলারের দর বাড়ছে, ঠিক যেমন অন্যান্য সংকটের সময়ও ডলারের দর ও চাহিদা বাড়ে।