আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হিনডেনবার্গ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে

আদানি গ্রুপফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ তোলা যুক্তরাষ্ট্রের শর্ট সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ খবরে আজ ভারতের শেয়ারবাজারে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসার ঠিক আগে সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন।

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আদানি গ্রুপের শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ তোলে এই হিনডেনবার্গ রিসার্চ। সেখানে গ্রুপের সংস্থার শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির জন্য অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের অভিযোগ তোলা হয় আদানির বিরুদ্ধে। সেই সময় বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল আদানি গ্রুপ। একাধিক সংস্থার শেয়ারের দর তলানিতে চলে গিয়েছিল। একধাক্কায় ১৫০ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

ওই ঘটনায় ভারতের মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ যে দালাল স্ট্রিটে অবস্থিত, সেই সড়কে রীতিমতো রক্তবন্যা বয়ে যায়। তবে আদানি গোষ্ঠী বরাবর যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

ব্যক্তিগত নোটে প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ডারসন লিখেছেন, কোম্পানি নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে, এখন আরও এগিয়ে যাওয়ার সময়। অ্যান্ডারসন দাবি করেছেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই হিনডেনবার্গ বন্ধ করার কাজ চলছে। বেশ কিছু তদন্ত বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করেই কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বস্তুত কোম্পানি গুটিয়ে নেওয়ার পক্ষে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি হিনডেনবার্গ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের রিপাবলিকান দলীয় সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে আদানি এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে যেসব তদন্ত হয়েছে, তার সব নথিপত্র সংরক্ষণের জন্য বিচার বিভাগের কাছে অনুরোধ জানান। হিনডেনবার্গ রিসার্চের বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক যোগ না থাকলেও ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক আগে এ সিদ্ধান্ত এবং হাউস রিপাবলিকান সদস্যের এই অনুরোধে এ ঘটনার রাজনৈতিক যোগ নিয়ে জল্পনাকল্পনার ডানা মেলছে।

নিজেদের ‘ফরেনসিক আর্থিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান’ হিসেবে পরিচয় দেয় হিনডেনবার্গ রিসার্চ। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ব্যবসার জগতে অব্যবস্থাপনা ও হিসাবের অনিয়মের মতো দুর্নীতি ও জালিয়াতি খুঁজে বের করে তারা। তারা বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ, ঋণ ও শেয়ারের মতো বিষয়গুলো। নিজেদের ওয়েবসাইটে হিনডেনবার্গ ঘোষণা করেছে, তারা ‘মানবসৃষ্ট দুর্যোগ’ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখে।

কোম্পানিটি নিজেরাই বিনিয়োগ করে। ২০১৭ সালে নাথান অ্যান্ডারসন এটি প্রতিষ্ঠা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাট থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতক করেছেন নাথান অ্যান্ডারসন। এরপর ডেটা কোম্পানি ফ্যাক্টসেট রিসার্চ সিস্টেমসে বিভিন্ন বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির জন্য কাজ শুরু করেন।

হিনডেনবার্গের ওয়েবসাইট বলছে, ২০১৭ সাল থেকে কমপক্ষে ১৬টি কোম্পানির সম্ভাব্য অনিয়ম তারা উদ্‌ঘাটন করেছে। এর মধ্যে একটি ছিল টুইটার।

হিনডেনবার্গের এসব গবেষণা আর প্রতিবেদন টাকা বানাতে সাহায্য করে। যেসব কোম্পানিকে তারা লক্ষ্যবস্তু বানায়, তাদের ক্ষেত্রে হিনডেনবার্গ কখনো ‘শর্ট’ (শেয়ারের দর কমতে পারে, এমন অনুমান করে তা আগাম বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করার চেষ্টা করেন), আবার কখনো ‘লং’ (দাম বাড়বে এই আশায় শেয়ার কেনা) অবস্থান নেয়। আর এর ফলে শেয়ারের দাম ওঠানামা করে, আর লাভের অর্থ ঘরে তোলে হিনডেনবার্গ।

এ খবরে আজ সকালে ভারতের শেয়ারবাজারে আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, আদানি এন্টারপ্রাইজের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, আদানি টোটাল গ্যাসের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ, আদানি এনার্জি সলিউশনসের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আদানি পোর্টের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।