বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ কোম্পানি কারা
কয়েক দিন ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি কোনটি, তা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। মাত্রই মাইক্রোসফটের মতো মহিরুহ কোম্পানিকে পেছনে ফেলে শীর্ষ কোম্পানি হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছিল চিপ কোম্পানি এনভিডিয়া। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপ বানিয়ে বাজিমাত করে দিয়েছে তারা। কিন্তু এনভিডিয়াকে হটিয়ে মাইক্রোসফট আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির আসনে উঠে এসেছে।
মূলত কোম্পানির শেয়ারের দামের ওপর নির্ভর করে, কোন কোম্পানি সবচেয়ে দামি। একটি কোম্পানির বাজারে যত স্টক আছে, তার সম্মিলিত মূল্য বাজার মূলধন হিসেবে পরিচিত। এই যে দামি কোম্পানি নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তা মূলত এই বাজার মূলধনের ভিত্তিতে। শেয়ারের দাম বাড়লে কোম্পানির বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায়; তেমনি শেয়ারের দাম কমলে বাজার মূলধন কমে যায়।
দেখে নেওয়া যাক, এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি কোনগুলো।
মাইক্রোসফট: গতকাল রোববার দুপুরে এই প্রতিবেদন লেখার সময় বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির আসনে ছিল মাইক্রোসফট। তখন এই সফটওয়্যার কোম্পানির বাজার মূলধন ছিল ৩ দশমিক ৩৪ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৩৪ হাজার কোটি ডলার। ২০১৯ সালে মাইক্রোসফটের বাজার মূলধন প্রথম ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছিল। চলতি বছরে তা ৩ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। এ বছর এখন পর্যন্ত এই কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।
অ্যাপল: গত শনিবার আরেক প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের বাজার মূলধন ছিল ৩ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি ডলার। বাজার মূলধনের দিক থেকে এটি এখন বিশ্বের দ্বিতীয় কোম্পানি। ২০১৮ সালে অ্যাপলের বাজার মূলধন প্রথম ১ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। এরপর ২০২২ সালে বিশ্বের ইতিহাসে তারা প্রথম কোম্পানি হিসেবে ৩ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে।
এনভিডিয়া: গত সপ্তাহে বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির আসনে উঠে আসে চিপ নির্মাতা কোম্পানি এনভিডিয়া। এরপর সারা পৃথিবীতে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। মাইক্রোসফটকে হটিয়ে তারা বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির আসনে বসে, কিন্তু দুই দিনের ব্যবধানে আবার সেই মাইক্রোসফটের কাছে শীর্ষ স্থান হারায় এনভিডিয়া। রোববার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখার সময় কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার কোটি ডলার। মাত্র ২০২২ সাল শেষে এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ছিল ৩৬ হাজার ৪১৮ কোটি ডলার। গত এক বছরে এই কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ১৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।
অ্যালফাবেট: সার্চ ইঞ্জিন গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটও পিছিয়ে নেই। বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির তালিকায় তাদের অবস্থান চতুর্থ। গতকাল রোববার এই প্রতিবেদন লেখার সময় গুগলের বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ২১ হাজার কোটি ডলার। গত এক বছরে অ্যালফাবেটের বাজার মূলধন বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০২০ সালে বছর শেষে অ্যালফাবেটের বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি ডলার।
অ্যামাজন: বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছে আরেক মহিরুহ কোম্পানি অ্যামাজন। অনলাইনে বই বিক্রি দিয়ে ব্যবসা শুরু করা অ্যামাজনের বাজার মূলধন এখন ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি ডলার। গত এক বছরে এই কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ৪৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০২০ সাল শেষে অ্যামাজনের বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি ডলার। ২০২২ সাল শেষে অবশ্য অ্যামাজনের বাজার মূলধন ৮৫ হাজার ৬৯৪ কোটি ডলারে নেমে আসে।
সৌদি আরামকো: শীর্ষ ১০টি দামি কোম্পানির তালিকায় প্রথম পাঁচটিই প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান। ষষ্ঠ স্থানে আছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রমালিকানাধীন তেল কোম্পানি আরামকো। এই প্রতিবেদন লেখার সময় কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি ডলার। গত এক বছরে অবশ্য সৌদি আরামকোর বাজার মূলধন ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কমেছে। মূলত বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় তাদের বাজার মূলধন কমেছে।
মেটা: শীর্ষ ১০ দামি কোম্পানির তালিকায় সপ্তম স্থানে আছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। প্রতিবেদন লেখার সময় এই কোম্পানির বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি ডলার। গত এক বছরে এই কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০২১ সালে মেটার বাজার মূলধন ছিল ৯২ হাজার ১৯৩ কোটি ডলার। এরপর তথ্য ফাঁস কেলেঙ্কারিতে মেটা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে। ২০২২ সালে তাদের বাজার মূলধন কমে ৩১ হাজার ৯৮৮ কোটি ডলারে নেমে আসে। এরপর অবশ্য তারা অনেকটা ঘুরে দাঁড়ায়।
টিএসএমসি: তালিকার আগের কোম্পানিগুলো বহুল পরিচিত হলেও কোম্পানিটি অতটা নয়। এই কোম্পানির পূর্ণ নাম তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি—বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী কোম্পানি এটি। এই প্রতিবেদন লেখার সময় টিএসএমসির বাজার মূলধন ছিল ৯০ হাজার ২২৩ কোটি ডলার। গত এক বছরে তাদের বাজার মূলধন বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে: বিনিয়োগগুরুখ্যাত ওয়ারেন বাফেটের কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের স্থান নবম। এ প্রতিবেদন লেখার সময় কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ৮৮ হাজার ৪৭৯ কোটি ডলার। গত এক বছরে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বাজার মূলধন বেড়েছে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর্থিক খাত, জ্বালানি সরবরাহ, উৎপাদন, খুচরা–পাইকারি বিক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা আছে এই কোম্পানির।
এলি লিলি: বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ কোম্পানি এটি। বিশ্বের ১৩টি দেশে তাদের ওষুধ উৎপাদন কারখানা আছে; মোট কর্মী ৩৩ হাজার। এ প্রতিবেদন লেখার সময় এলি লিলির বাজার মূলধন ছিল ৮৪ হাজার ৪ কোটি ডলার। গত এক বছরে এই কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ৯৩ দশমিক ১২ শতাংশ।
দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দামি কোম্পানির অর্ধেকেরও বেশি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান। মানুষের জীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রযুক্তির প্রভাব যে বাড়ছে, এই তথ্য তার সাক্ষ্য দেয়।
বিশেষ করে কোভিড মহামারির সময় থেকে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর পসার দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে। গত চার বছরেই এই কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন ১ ট্রিলিয়ন থেকে ২ ট্রিলিয়ন এবং তারপর ৩ ট্রিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর এআই নিয়ে কাজ করা এনভিডিয়ার উত্থান আরও লক্ষণীয়। ভবিষ্যৎ পৃথিবী যে এআইনির্ভর হবে, তার ইঙ্গিত এর মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।
সূত্র: কোম্পানিসমার্কেটক্যাপ ডট কম।