তিন মাসে এক মার্কিন ব্যাংকে আমানত কমেছে ১০ হাজার কোটি ডলার

রয়টার্স

বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের আমানত ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার কমে গেছে, এমন খবরে গতকাল সোমবার ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ২০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।

এরপর ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আমানত প্রত্যাহারের পর ব্যাংকের স্থিতিপত্র পুনর্গঠনের চিন্তা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।

গত মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হওয়ার পর দেশটির বড় বড় কিছু ব্যাংকের আমানত পেয়েছিল ফার্স্ট রিপাবলিক। সে জন্য এ সময় তাদের মুনাফাও প্রত্যাশার চেয়ে বাড়ে। কিন্তু আমানত কমে যাওয়ার ঘটনা বাকি সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ১০৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলার, আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে যা ছিল ১৭৬ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন বা ১৭ হাজার ৬৪৩ হাজার কোটি ডলার।

এ সময় তারা ব্যাংক অব আমেরিকা করপোরেশন, সিটি গ্রুপ ইনকরপোরেশন, জে পি মরগান অ্যান্ড চেজ এবং ওয়েলস ফার্গো অ্যান্ড কো’র কাছ থেকে ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার পেয়েছে। অর্থাৎ এই সহায়তা না পেলে ব্যাংকটির অবস্থা আরও খারাপ হতো।

ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা নেয়াল হল্যান্ড বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘মার্চে দুটি ব্যাংক বন্ধ হওয়ার কারণে আমাদের ব্যাংক থেকেও অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে।’

এই পরিস্থিতিতে সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক স্থিতিপত্র সংকোচনের পাশাপাশি ব্যয় কমানোর চিন্তা করছে। এ ক্ষেত্রে সবাই যা করে, তারা সেটাই ভাবছে, অর্থাৎ নির্বাহীদের বেতন হ্রাসের পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের চিন্তা করছে তারা।

এ ছাড়া তারা বিমা করা আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি করা ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের কাছ থেকে ঋণ করাও কমাতে চায়। ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফার্স্ট রিপাবলিকের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘ব্যয় কমানোর জন্য আমরা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য স্থিতিপত্রের আকার কমিয়ে আনা। মাত্র ১৫ মিনিটের ব্রিফিংয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিশ্লেষকদের প্রশ্ন গ্রহণ করেনি।’

জেনি মন্টোগোমারি স্কট এলএলসির বিশ্লেষক টিমথি কোফে এ প্রসঙ্গে রয়টার্সকে জানান, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময়ও একই দৃশ্য দেখা গেছে, অর্থাৎ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিশ্লেষকদের প্রশ্ন নেয়নি।

গত মার্চে পরপর দুটি ব্যাংক বন্ধ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তখন দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোসহ হোয়াইট হাউস অন্যান্য ব্যাংকের ওপর নজর রাখা শুরু করে। সবচেয়ে বেশি নজরদারিতে ছিল ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। কর্মকর্তারাও জানিয়েছিলেন, এ ব্যাংক কিছুটা বেশি চাপের মুখে। তবে তখনই তাঁরা ফার্স্ট রিপাবলিকের বিষয়ে পদক্ষেপ নেননি।

আরও পড়ুন

মাঝারি ব্যাংকগুলো নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা জে পি মরগান ও সিটির মতো বড় ব্যাংকগুলোতে আমানত সরিয়ে নিচ্ছেন। এতে বাজারে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে। মাঝারি ব্যাংকগুলো সংকটের মুখে পড়ছে। ফার্স্ট রিপাবলিক থেকে বছরের প্রথম প্রান্তিকে ১০ হাজার কোটি ডলার আমানত কমে যাওয়ার এটিই মূল কারণ।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, গত ২৭ মার্চের পর থেকে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেওয়ার হার কমেছে। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত তা একরকম স্থিতিশীল ছিল।

বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফার্স্ট রিপাবলিকের শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ দশমিক ২৩ ডলার। যদিও বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, শেয়ারপ্রতি আয় হতে পারে ৮৫ সেন্টের কিছু বেশি। তবে ফার্স্ট রিপাবলিক মূলত উচ্চ আয়ের মানুষের ব্যাংক। তাদের আমানত আনতে মর্টগেজ ও ঋণে বিশেষ হারে সুদ দিয়েছে তারা। ফলে আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর তুলনায় ফার্স্ট রিপাবলিক অনেকটাই ভঙ্গুর।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফার্স্ট রিপাবলিক বিপদে পড়লে তাকে কেনার ক্রেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে, কারণ, স্বল্প সুদে এত বিপুল পরিমাণ মর্টগেজ থেকে আয় খুব কমই হয়।

এদিকে সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংক জানিয়েছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের আমানত কমেছে ৬ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার।