রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা আরও বাড়িয়েছে ভারত
ইউরোপ-আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে রাশিয়া থেকে তেল কেনা আরও বাড়িয়েছে ভারত। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দিনে ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল আমদানি করেছে ভারত। এ নিয়ে টানা তিন মাস ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল কিনল।
এর আগের মাস নভেম্বরে রাশিয়া থেকে ভারত দৈনিক আমদানি করেছে গড়ে ৯ লাখ ৯ হাজার ৪০৩ ব্যারেল। আর অক্টোবর মাসে করেছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬ ব্যারেল।
ডিসেম্বরের আগে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির রেকর্ড হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। সেই মাসে ভারত দিনে গড়ে ৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ ব্যারেল আমদানি করে বলে জানিয়েছে জ্বালানির চালান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ভরটেক্সা।
তবে পরিস্থিতি এমন ছিল না। গত বছরের মার্চ মাসে ভারতের মোট অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) আমদানির মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ এসেছিল রাশিয়া থেকে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তা কয়েক গুণ বেড়েছে।
ভারত ঐতিহাসিকভাবে সৌদি আরব ও ইরাক থেকে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তাদের পেছনে ফেলে রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে ভারত। বর্তমানে ভারতের মোট আমদানি করা তেলের ২৫ শতাংশই আসছে রাশিয়া থেকে।
এর কারণ হলো, রাশিয়া ভারতকে অনেক কম মূল্যে তেল দিচ্ছে। ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে রাশিয়া পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে। তখন সেই নিষেধাজ্ঞার খড়্গ এড়াতে তারা বিভিন্ন দেশকে ছাড়ে তেল কেনার প্রস্তাব দেয়। চীনও ভারতের মতো দেশ সেই প্রস্তাব লুফে নেয়। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজেদের অবস্থান অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন।
সম্প্রতি সমুদ্রপথে পরিবহন করা রাশিয়ার তেলে মূল্যসীমা আরোপের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ঠিক সেই সময়েই রাশিয়ার তেল আমদানি বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি। রয়টার্স জানায়, বর্তমানে ইইউ নির্ধারিত মূল্যসীমার চেয়েও অনেক কম দামে বা প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের নিচে রাশিয়ার তেল কেনা যাচ্ছে। ভারত সেই সুযোগ লুফে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে রাজনৈতিক কারণেই সে সুযোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে দেশের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। বোঝা বাড়ছে ক্রেতাদের।
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী ও আমদানিকারক দেশ। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদার মোট ৮৫ শতাংশই তারা আমদানি করে। এরপর তা স্থানীয় পরিশোধনাগারে শোধন করে ডিজেল ও পেট্রলের মতো জ্বালানি তৈরি করা হয়।
ভরটেক্সা জানিয়েছে, ডিসেম্বর মাসে ইরাক থেকে দৈনিক ৮ লাখ ৩ হাজার ২২৮ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে ভারত। সৌদি আরব থেকে করেছে ৭ লাখ ১৮ হাজার ৩৫৭ ব্যারেল। এরপর এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। পারস্য উপসাগরীয় এই দেশ থেকে ডিসেম্বর মাসে ভারতে দৈনিক ৩ লাখ ২৩ হাজার ৮১১ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত নিয়েছে দৈনিক ৩ লাখ ২২ হাজার ১৫ ব্যারেল, যা নভেম্বরের ৪ লাখ ৫ হাজার ৫২৫ ব্যারেলের তুলনায় অনেকটাই কম।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জিজ্ঞাসা করা হয়, ভারত কেন পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রাশিয়ার তেল কিনছে? জবাবে তিনি যেসব উত্তর দিয়েছেন, তার সবই নেটিজেনদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। যেমন তিনি বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপ রাশিয়ার তেল কিনেছে ভারতের চেয়ে ছয় গুণ, তাহলে ভারত কেন কিনবে না? আবার তিনি বলেছেন, যাদের মাথাপিছু আয় ৬০ হাজার ডলার, তারাও জনগণের কথা চিন্তা করে রাশিয়ার তেল কিনছে। অথচ ভারতের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারের ওপরে, ভারত কেন কিনবে না?
তবে জয়শঙ্করের সবচেয়ে সাহসী উত্তর হচ্ছে, ইউরোপ কেন মনে করে, তার সমস্যা অন্যদেরও সমস্যা হবে? অর্থাৎ এই যুদ্ধ রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকার সমস্যার ফসল, এর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নেই।