দ্বিতীয় প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি ৪.৭%, এ নিয়ে টানা চার প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রত্যাশাতীত প্রবৃদ্ধি হয়েছে শ্রীলঙ্কার। চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রবৃদ্ধির এই পরিসংখ্যান রনিল বিক্রমাসিংহের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে টানা চার প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলো।
বিজনেস টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, বছরের দ্বিতীয় অর্থাৎ এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ব্লুমবার্গের এক জরিপে অর্থনীতিবিদেরা বলেছিলেন, দ্বিতীয় প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে দ্বিতীয় প্রান্তিকে। যদিও বছরের প্রথম প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
২১ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার সাধারণ নির্বাচন। গণ–অভ্যুত্থানের মুখে ২০২২ সালে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশত্যাগের পর এটাই শ্রীলঙ্কার প্রথম সাধারণ নির্বাচন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশটির আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ পেয়েছে। অর্থনীতিতে একধরনের স্থিতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
তারপরও রনিল বিক্রমাসিংহের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আছে। মূলত করহার বৃদ্ধি ও পরিষেবা মাশুল বৃদ্ধির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন শুরু করে শ্রীলঙ্কা। বেশ কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে এর ফল পেতে শুরু করে দেশটি। সুনির্দিষ্টভাবে বললে, শ্রীলঙ্কা সরকার ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব বাড়িয়েছে আর সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করে করজাল বিস্তৃত করেছে। মূলত এই দুটি নীতি-পদক্ষেপের ফলেই ঘুরতে শুরু করে দেশটির অর্থনীতির চাকা। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দেশটিকে এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
আইএমএফের ঋণ পাওয়ায় শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশটির রিজার্ভ দাঁড়ায় ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলারে; ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যা ছিল ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৪৪০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ৯ মাসে রিজার্ভ বেড়েছে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলার। অর্থ পাচারও অনেকাংশে কমেছে।
প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধিতে শ্রীলঙ্কার নতুন সরকারকে ঋণ পুনর্গঠনে জোর দিতে হবে বলে সংবাদে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু ঋণের পুনর্গঠন হয়েছে। নতুন সরকারকে সেই ধারা এগিয়ে নিতে হয়। সেই সঙ্গে আইএমএফের নির্দেশিত সংস্কারও করতে হবে।
টানা পাঁচ প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার পর ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তখন প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৬ শতাংশ। সে বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রবৃদ্ধির হার আরও বেড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়। এরপর দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হলো ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। টানা দুই বছর অর্থনৈতিক সংকোচনের পর চলতি বছর সামগ্রিকভাবে দেশটি প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদেরা।