পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলো যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, সেগুলোর প্রসঙ্গে এ তথ্য দিয়েছে তারা।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল রাশিয়ার তেল ও গ্যাস। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলোর রাজস্ব অনেকটাই কমেছে। বরং জাহাজ ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর বাড়বাড়ন্ত হয়েছে।
জাহাজ ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো আবার রাশিয়ার নয়, চীন, ভারত, গ্রিস ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের। হাতে গোনা দু-চারটা কোম্পানি আছে রাশিয়ার।
এসব কোম্পানি কিন্তু পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছে না; বরং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধের অর্থায়ন বন্ধে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার সুফল পাচ্ছে কোম্পানিগুলো।
রয়টার্সের হাতে এসব কোম্পানির কিছু ইনভয়েস এসেছে। এতে দেখা গেছে, ৭০ হাজার ব্যারেলের একটি ট্যাংকার বাল্টিক বন্দর থেকে ভারতের পরিশোধনাগারে যেতে এক বছর আগে ৫ থেকে ১০ লাখ ডলার ভাড়া নিত, এখন তারা নিচ্ছে এক কোটি ডলারের বেশি। জাহাজ কোম্পানিগুলোর এখন খরচ পড়ছে ১০ লাখ ডলারের মতো। অর্থাৎ, তারা এখন জাহাজপ্রতি ৯০ লাখ ডলারের মতো মুনাফা করছে।
তবে চীন ও ভারতের পরিশোধনাগারগুলো নানা ধরনের ছাড় পাচ্ছে। রাশিয়া ভারতকে ব্যারেলপ্রতি ১৫ ডলারের মতো ছাড় দিচ্ছে। ফলে প্রতি মাসেই রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি বাড়ছে। তবে ভারতের পরিশোধনাগারগুলো কত মুনাফা করছে, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা জানিয়েছে বলে সংবাদে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
জ্বালানিসংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ভর্টেক্সার তথ্যানুসারে, জানুয়ারি মাসে রাশিয়া থেকে দিনে ১২ দশমিক ৭ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো, যা দেশটির মোট তেল আমদানির ২৮ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা ছিল ২৬ শতাংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও ভারতের মোট আমদানি করা তেলের মধ্যে রাশিয়ার তেল ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ একবার রাশিয়ার তেল আমদানির বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করলেও দেশের পরিশোধনাগারগুলোর সেই তেল পরিশোধনের সক্ষমতা নেই। উদ্যোগ সেখানেই থেমে যায়। এ কারণে রাশিয়ার তেল কিনে মূল্যবান বিদেশি মুদ্রা বাঁচাতে পারছে না বাংলাদেশ। বেশি দামে বিশ্ববাজার থেকে তেল কেনার কারণে দেশেও মূল্যস্ফীতি মাথাচাড়া দিয়েছে।
এ মাসেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্বিতীয় বছরে পা দেবে। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার উপার্জন কমে গেছে, যদিও তার রপ্তানির পরিমাণ স্থিতিশীল।
গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম তরতর করে বেড়ে যায়। যুদ্ধের আগে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের ঘরে, যুদ্ধ শুরুর পর নিমেষেই তা ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর গত মার্চ মাসেই তা ১৩৯ ডলারে উঠে যায়। এর পর থেকে দাম আবার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এখন তা আবার ৮০ ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া বিশ্ববাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে বিক্রি করেছে। এরপর গত ডিসেম্বর মাসে ধনী দেশগুলোর সংগঠন জি৭ রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দেয়। জানুয়ারি মাসে দেখা গেল, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাশিয়ার তেল বিক্রির রাজস্ব ৪০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে রাশিয়ার যুদ্ধ চালানোর মতো অর্থে টান পড়েছে বলে মনে করছেন কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের নন-রেসিডেন্ট ফেলো সার্জেই ভাকুলেঙ্কো।
যুদ্ধের আগে ভাকুলেঙ্কো রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গাজপ্রমের কৌশলগত প্রধান ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর পর তিনি রাশিয়া ত্যাগ করেন।