যুক্তরাষ্ট্রে এবার ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকে নজরদারি
পরপর দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোসহ হোয়াইট হাউস এখন অন্যান্য ব্যাংকের ওপর নজর রাখা শুরু করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস এখন ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ছোটখাটো ব্যাংক নজরদারির মধ্যে রেখেছে। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, এসভিবি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ করাসহ যেসব ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে, তার বদৌলতে সেখানকার ব্যাংকব্যবস্থা যথেষ্ট সুরক্ষিত।
আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে তাঁরা বলেছেন, তাঁদের তহবিল নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, ‘আমরা যে পরিস্থিতি ঠিকঠাক মোকাবিলা করছি, তা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন অনেক সময় ব্যয় হচ্ছে।’ এ ছাড়া এসভিবির সমপর্যায়ের ব্যাংকগুলোর সমস্যার মুখে পড়ার সম্ভাবনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হোয়াইট হাউস সে দেশের রাজস্ব বিভাগ ও ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনের (এফডিআইসি) সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করছে।
এখন সবচেয়ে নজরদারিতে আছে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। কর্মকর্তারা বলছেন, এ ব্যাংক কিছুটা বেশি চাপের মুখে। তবে এখনই তারা ফার্স্ট রিপাবলিকের বিষয়ে কিছু করছে না।
বাজারে মাঝারি ব্যাংকগুলো নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা এখন জে পি মর্গান ও সিটির মতো বড় ব্যাংকগুলোতে আমানত সরিয়ে নিচ্ছেন। ঠিক যেমন বাংলাদেশের ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ার পর ভালো ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়ে গিয়েছিল। এতে বাজারে একধরনের অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউস এ বিষয়েও অবগত। তারা ব্যাংক খাতে সুস্থ ও জোরদার প্রতিযোগিতা চায়।
তবে কর্মকর্তারা আশাবাদী, গ্রাহকেরা যখন বুঝতে পারবেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকব্যবস্থা ঠিকঠাক কাজ করছে, তখন তাঁরা আবার ছোট ব্যাংকগুলোতে ফিরতে পারেন।
অর্থনীতিবিদেরা বলেন, অর্থনীতিকে কার্যকর করতে মানুষের সঞ্চয় বিনিয়োগে রূপান্তরিত করতে হয়। তবে এখানে একধরনের দ্বন্দ্ব আছে। সেটা হলো, অপ্রত্যাশিত ঘটনার ক্ষেত্রে সঞ্চয়কারীরা তাৎক্ষণিকভাবে সঞ্চয় ভেঙে ফেলতে চান।
কিন্তু ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিকেরা মেয়াদের মধ্যে ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা চান, অর্থাৎ তাঁদের মেয়াদের আগেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে না, সেই নিশ্চয়তা। ব্যাংক মূলত সঞ্চয়কারী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ তারা সঞ্চয়কারীদের যেমন তাৎক্ষণিকভাবে সঞ্চয় ভাঙার সুযোগ দেয়, তেমনি ঋণ গ্রহণকারীদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণও দেয়।
কিন্তু ব্যাংক যে এভাবে উভয় পক্ষকে সেবা দিচ্ছে, তাতে ব্যাংক নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা থাকে। গুজব সৃষ্টি হয়, ব্যাংক এ কাজ করতে গিয়ে ধসে পড়তে পারে। বিপুলসংখ্যক সঞ্চয়কারী যখন একসঙ্গে সঞ্চয় ভাঙার জন্য ব্যাংকে যান, তখন এ গুজব বাস্তব রূপ লাভের কাছাকাছি চলে যায়। এ বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সরকার উদ্ধারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। সেটা হলো, আমানতের বিমা দিয়ে ব্যাংকের জন্য আপৎকালীন ব্যাংকার হিসেবে আবির্ভূত হওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রে এফডিআইসি গঠন করা হয়েছে ঠিক এ লক্ষ্যেই। লক্ষণীয় বিষয়, এবার মার্কিন সরকার বেইল আউট বা করদাতাদের অর্থ দিয়ে ব্যাংক বাঁচাবে না। আমানতের বিমা তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছে। তবে বিমার আওতার বাইরে যে অর্থ আছে, তার নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনে ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করা হবে বা ব্যাংক খাতের ওপর বিশেষ শুল্ক আরোপ করা হবে।
সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসভিবি ও সিগনেচার ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকার।