চীনের আমদানি–রপ্তানি কমেছে, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার নিয়ে শঙ্কা
জুলাই মাসে চীনের আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই কমেছে। চীনের শুল্ক বিভাগ আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, গত জুলাই মাসে দেশটিতে রপ্তানি কমেছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর এত হারে দেশটির আমদানি-রপ্তানি কমেনি। খবর রয়টার্সের
অর্থনীতিবিদদের নিয়ে রয়টার্সের করা এক জরিপে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল যে জুলাই মাসে চীনের আমদানি কমবে ৫ শতাংশ এবং রপ্তানি কমবে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে কমেছে আরও অনেক বেশি। এর আগে জুন মাসেও দেশটির রপ্তানি কমেছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এই পরিপ্রেক্ষিতে বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চীনের রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু জুলাই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে কমেছে ২০ দশমিক ৬ শতাংশ।
তবে গত মাসে চীনের জ্বালানি তেল আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বাড়লেও জুন মাসের তুলনায় ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। সেই সঙ্গে সয়াবিন আমদানি বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে এসব তেল চীন অনেক কম দামে আমদানি করছে। সে কারণে তাদের আমদানি ব্যয় কমেছে।
এদিকে গত জুলাই মাসে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ কমিটি পলিটব্যুরোর বৈঠকে দেশটির শীর্ষ নেতারা অর্থনীতি চাঙা করার জন্য সময়োপযোগী রাজস্ব ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নেতাদের আশা, এতে দেশটির অবকাঠামো ও উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়বে।
দেশটির জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন বলেছে যে সরকার অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনতে বিনিয়োগকারীদের অটোমোবাইল, রিয়েল এস্টেট ও পরিষেবা খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দিচ্ছে। যদিও বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন, এসব খাতের ইতিমধ্যে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এসব খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য সরকারকে আরও নতুন কিছু করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুদ্রানীতি কঠোর করেছে। এখন তারা চাচ্ছে, মুদ্রানীতি তেমন একটা শিথিল না করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে। যদি সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে না পারে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা চীনের ভেতরে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। এর ফলে দেশটির অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে এ রকম পরিস্থিতি বিরাজ করলে দেশটির নির্মাণ, উৎপাদন, সেবা খাতসহ বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্প মুনাফায় প্রভাব পড়বে। চীনের আমদানি কমার কারণে এশীয় দেশগুলোর রপ্তানিতে বড় প্রভাব পড়েছে। জুলাই মাসে চীনে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে, যা গত ৩ মাসে সর্বনিম্ন।
এখন তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কম হলে বিশ্ব অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে। এতে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধারায় আবারও ছেদ পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।