বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলা আরেক ব্যক্তির মৃত্যু, চলতি বছর এ নিয়ে দুজন

বোয়িংছবি: এএফপি ফাইল ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান কোম্পানি বোয়িংয়ের উৎপাদনে ত্রুটি আছে—এমন অভিযোগ তোলার পর চলতি বছর দুজনের মৃত্যু হলো।

বোয়িংয়ের যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী স্পিরিট অ্যারোসিস্টেম ইচ্ছা করে খারাপ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন সেখানকার সাবেক কর্মী জোসুয়া ডিন। গত মঙ্গলবার ৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল থেকে তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের সংক্রমণের কথা বলা হলেও এই ঘটনায় বোয়িংয়ের ওপরে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাস দুয়েক আগে আরও এক প্রতিবাদীর এ রকম অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। জন বার্নেট নামের সেই ব্যক্তি সরাসরি বোয়িংয়েই কাজ করতেন। সূত্র দ্য গার্ডিয়ান

সংবাদমাধ্যমের খবর, স্পিরিট অ্যারোসিস্টেমসের মান নিয়ন্ত্রকের কাজ করতেন ডিন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের যে যন্ত্র স্পিরিট তৈরি করেছে, তার মধ্যে অনেকগুলোই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তিনি নিজের এই বক্তব্য নথিভুক্তও করেছিলেন। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। ডিন দাবি করেছিলেন, প্রতিবাদের জন্যই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই সপ্তাহ আগে ডিনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

এর আগে যে প্রতিবাদকারীর মৃত্যু হয় অর্থাৎ জন বার্নেট বোয়িংয়ে তিন দশকেরও বেশি কাজ করার পরে ২০১৭ সালে ৬২ বছর বয়সে অবসর নেন। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ তোলেন তিনি। দাবি করেন, দ্রুত বিমান সরবরাহ করতে গিয়ে খারাপ যন্ত্রাংশ লাগানো হয়েছে এবং তা করা হয়েছে সচেতনভাবে। তাঁর এই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে নিজেদের অভিযোগের পক্ষে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছিলেন বার্নেট, যদিও বোয়িং সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পাঁচ-ছয় বছর ধরেই বোয়িংয়ের অবস্থা ভালো নয়। কোম্পানিটির ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে আছে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সংঘটিত বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের দুটি দুর্ঘটনা। লায়ন এয়ার ও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের ওই দুর্ঘটনার তদন্ত নিষ্পত্তি করতে ২০২১ সালে বোয়িং ২৪ কোটি ৪০ লাখ জরিমানাসহ ২৫০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়। তখন ফ্লাইট-কন্ট্রোল সিস্টেমের ত্রুটি বিষয়ে দুই কর্মচারীকে দায়ী করা হয়েছিল। তদন্তে ওই ঘটনাগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এমনকি বোয়িং উড্ডয়নের নথিও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করছে না বলে জানা গেছে। কংগ্রেসকে পাঠানো চিঠিতে বোয়িং স্বীকার করেছে, আলাস্কা এয়ারলাইনসের বিমানের দরজার প্যানেল লাগানোর রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বোয়িংয়ের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়াদ ওজাকলি ওই চিঠিতে লেখেন, তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে; কিন্তু সে ধরনের নথি পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, বোয়িংয়ের ঘাটতি কেবল নথিপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সংস্থাটির প্রশাসক মাইক হুইটেকার সিএনএনকে বলেছেন, বোয়িংয়ের উৎপাদন ও সংযোজন প্রক্রিয়ায় গলদ আছে, যেমন কাজের আদেশ দেওয়া ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার। তিনি বলেছেন, ঠিক জায়গায় ঠিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, বোয়িংকে এটা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বোয়িংয়ের সামগ্রিক পরিচালনা পদ্ধতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্বারোপ করেন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর বোয়িংয়ে বিরুদ্ধে মুখ খোলা দুজন ব্যক্তির মৃত্যু বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই বিমান কোম্পানিকে আরও প্রশ্নের মুখে ফেলবে বরেই ধারণা করা হচ্ছে।