২০২৫ সালেই মার্কিন শেয়ারবাজারে ঘটতে পারে বিশাল ধসের ঘটনা
শেয়ারবাজারে বড় রকমের মূল্য সংশোধন ঘটতে পারে। ফলে বাজারে এমন ধস নামতে পারে, যা সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটের সময়ও দেখা যায়নি। বিনিয়োগকারীদের এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ হ্যারি ডেন্ট। তাঁর মতে, শেয়ারবাজার দেখে মনে হচ্ছে, এটি বিশাল এক বুদ্বুদের মধ্যে আছে।
বিজনেস ইনসাইডারের খবরে বলা হয়েছে, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে পাস করা এই অর্থনীতিবিদ বেশ কয়েক বছর ধরেই শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস ও অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার ভবিষ্যদ্বাণী করছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে শেয়ারবাজার ধসের এই ভবিষ্যদ্বাণী তাঁর সর্বশেষ সতর্কবার্তা। হ্যারি ডেন্ট মনে করেন, শেয়ারবাজারে বিশাল ধসের এ ঘটনা আগামী বছরেই ঘটতে পারে।
হ্যারি ডেন্ট বলছেন, বছরের পর বছর ধরে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে শিথিলতা চলছে, ফলে গত দশকে সম্পত্তির মূল্য অনেক বেড়ে গেছে।
বুদ্বুদ্ যখন ফেটে যাবে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শেয়ার সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ তার মূল্যের ৮৬ শতাংশ হারাতে পারে বলে হ্যারি ডেন্ট হিসাব করে বের করেছেন। অন্যদিকে ন্যাসডাক কম্পোজিটের মূল্য কমতে পারে ৯২ শতাংশ। লাখো কোটি ডলারের ধসের পূর্বাভাস করে তিনি বলেন, চিপ তৈরিকারক এনভিডিয়ার মতো হিরো স্টকের দাম ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
রোববার ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হ্যারি ডেন্ট বলেন, এটা অবশ্যই বিস্ফোরিত হবে। সবকিছু যে চূড়ায় পৌঁছে গেছে তার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, শেয়ারের দাম এখন আর খুব বাড়ছে, তেমন দেখা যাচ্ছে না।
হ্যারি ডেন্ট বলেন, শেয়ারবাজারের পতন ৪০ শতাংশের মতো হতে পারে। তিনি ধারণা করছেন, ১৪ বছর ধরে শেয়ারবাজারে বুদ্বুদ্ তৈরি হচ্ছে। সাধারণত পাঁচ কিংবা ছয় বছর ধরে এ ধরনের বুদ্বুদ্ তৈরি হয় এবং এরপর তার বিস্ফোরণ ঘটে। সুতরাং এখন যে বুদ্বুদ্ তৈরি হচ্ছে, তা ঘটছে ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে।
এই বুদ্বুদ্ এত লম্বা সময় ধরে তৈরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে ডেন্ট বলেন, ২০০৮ সাল থেকে যে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, তা এর জন্য আংশিক দায়ী। সেই সময়ের আর্থিক সংকটের পর বাজার ২৭ লাখ কোটি ডলারের প্রণোদনা থেকে সুবিধা পেয়েছে। পুঞ্জীভূত বাজেট-ঘাটতি ও অর্থ ছাপানোর তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি এই হিসাব করেছেন।
একই সঙ্গে গত দশকের বেশির ভাগ সময়ে সুদের হার ছিল অত্যন্ত কম। এই স্বল্প সুদের হার সম্পত্তির দাম বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে।
হ্যারি ডেন্ট বলেন, ‘এটা যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে চলছে, সে কারণে আপনি প্রত্যাশা করতে পারেন যে ২০০৮ ও ২০০৯ সালের তুলনায় বড় ধরনের একটি ধসের ঘটনা ঘটবে।’ ২০০০ সালের পর যে ডটকম বুদ্বুদ্ তৈরি হয়েছিল, সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ঘটছে দ্বিতীয় প্রযুক্তি বুদ্বুদ্।
শেয়ারবাজারে ধসের ঘটনা আগামী বছরের শুরু থেকে মাঝামাঝি দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন হ্যারি ডেন্ট। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেডারেল রিজার্ভ যে কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে, সে কারণে এটা হতে পারে বলে তিনি জানান।
সুদের হার বাড়লে শেয়ারের দাম কমে। কঠোর আর্থিক পরিস্থিতির কারণে তখন অর্থনীতি নিচের দিকে নামতে শুরু করে। ডেন্ট বলেন, বুদ্বুদের পর মন্দা আসে না। আসে বিষণ্নতা।
অর্থনীতি নিয়ে হ্যারি ডেন্টের ভাবনা ওয়াল স্ট্রিটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়। অনেক বিনিয়োগকারী আশা করছেন, অর্থনীতি মসৃণভাবে ভূমিতে নেমে আসবে। মার্কিন অর্থনীতি অবশ্য জোরালো অবস্থায় রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা শ্লথ হলেও তা ইতিবাচক রয়েছে। কর্মসংস্থান বাড়ছে এবং সর্বশেষ পরিসংখ্যান প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে।