গুরুত্বপূর্ণ সূচক অপরিবর্তিত, যুক্তরাষ্ট্র কি সুদ কমানোর পথে হাঁটবে

ফেডারেল রিজার্ভছবি: রয়টার্স

গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। সেবা খাতের ব্যয় সামান্য বাড়লেও পণ্যের দাম গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে, এতে সেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে।

সার্বিক মূল্যস্ফীতি পরিমাপে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সূচক পার্সোনাল কনজাম্পশন এক্সপেনডিচার্স প্রাইজ ইনডেক্স (পিসিই) এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে বাড়েনি এবং গত বছরের মে মাসের তুলনায় সামান্য কমেছে। গত বছরের মে মাসে এই সূচকের মান ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ; চলতি বছরের মে মাসে তা ২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাসের কাছাকাছি চলে এসেছে। অর্থাৎ বছরের শেষভাগে ফেড নীতি সুদহার কমাবে বলে সংবাদে বলা হয়েছে।

এর আগে এপ্রিল মাসে আগের মাস মার্চের তুলনায় পিসিই সূচক বেড়েছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এ নিয়ে গত ছয় মাসের মধ্যে এই সূচকের মান সবচেয়ে কমেছে। এ ছাড়া মে মাসে পণ্যের দাম শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে; গত নভেম্বর মাসের পর যা সবচেয়ে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পণ্য ও সেবার উৎপাদন মূল্য গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম হারে বেড়েছে। ফলে ফেডারেল রিজার্ভ যে অর্থনীতিকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, তা অর্জনের আশা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা; একই সঙ্গে মন্দা এড়িয়ে বেকারত্বের হার নিয়ন্ত্রণে রাখা।

সুদহার এখন ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হলেও মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী রয়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অংশত এর কারণ হলো, মহামারির সময় বাড়ির মালিকেরা যে অতি নিম্ন হারে সম্পত্তি বন্ধক রেখে পুনঃ অর্থায়নের সুবিধা পেয়েছিলেন, সেটা। ফেডারেল রিজার্ভ তখন বন্ধকি ঋণের সুদহার প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছিল। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে মার্কিন নাগরিকদের আর্থিক ভিত্তি নানাভাবে শক্তিশালী হয়েছে, সে কারণে তাঁদের হাতে এখন সঞ্চয় আছে এবং খুব একটা ঋণ করতে হচ্ছে না। তবে সেই সঞ্চয় কমতে শুরু করেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ সামগ্রিকভাবে কমতে শুরু করেছে। বছরের প্রথম তিন মাসে যেভাবে হঠাৎ করে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল, সেই পরিস্থিতি থেকে অনেকটা উত্তরণ হয়েছে। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে যা হওয়া দরকার; এ ক্ষেত্রে ঠিক তা–ই হচ্ছে। এই বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমাবে।

প্রকৃতপক্ষে পিসিই সূচকের হার আরও কম। মূল পিসিই সূচকের মান ছিল ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং খাদ্য ও জ্বালানি ব্যতীত তা ছিল ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যেহেতু এই মান ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, সেহেতু তা পরবর্তী দশকের ঘরে দেখানো হয়।

পিসিই ঠিক ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআই নয়। এই সূচকে ভোক্তাদের কেনা পণ্যের দামের পরিবর্তন পরিমাপ করা হয়। সিপিআই সূচকেও বিভিন্ন পণ্যের ব্যয় পরিমাপ করা হয়; কিন্তু পিসিই সূচকের পরিসংখ্যান ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যানালাইসিসের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়। এর অর্থ হলো, পিসিই দিয়ে মার্কিন অর্থনীতির পুরো চিত্র বোঝা যায়। স্থায়ী ও অস্থায়ী পণ্য ও সেবায় কত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, পিসিই সূচকে তা পরিমাপ করা হয়।

পিসিই সূচক দিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ গতিবিধি পরিমাপ করেন। এখানেই পিসিই সূচকের গুরুত্ব। এই সূচকের মান পরপর দুই মাসে একই থাকায় বিনিয়োগকারীদের মনে আশা তৈরি হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ সেপ্টেম্বর মাসে নীতি সুদহার কমাবে।