আরও কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি, জোরালো হয়েছে নীতি সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা
আগস্ট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার আরও কমেছে। এই বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার হ্রাসের পূর্বঘোষণা আরও শক্ত ভিত পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, গত আগস্ট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ; অর্থাৎ ফেডারেল রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে মূল্যস্ফীতির হার। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি। জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কেও মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারপর দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহে নীতি সুদ হ্রাসের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকে নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি হারে তা কমার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের উত্তর আমেরিকাবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ পল অ্যাশওয়ার্থ বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে তা ঠিক; কিন্তু আবাসন খাতের মূল্যস্ফীতি যতটা দ্রুত কমবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, ততটা দ্রুত তা কমছে না। মূল্যস্ফীতি একেবারে হারিয়ে যায়নি।’
তবে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্যের দাম মোটামুটি স্থির আছে। দেখা গেছে, আগস্ট মাসে এসব পণ্যের দাম জুলাইয়ের সাপেক্ষে অপরিবর্তিত আছে। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১ শতাংশের কম।
আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পেট্রলের দাম কমেছে। জুলাই মাসের তুলনায় তা যেমন কমেছে, তেমনি গত বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় দাম কমেছে ১০ শতাংশের বেশি। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
খাদ্য ও জ্বালানির দাম সাধারণত বেশি ওঠানামা করে। সে জন্য এই দুটি বাদ দিয়েও মূল্যস্ফীতির আরেকটি হিসাব করা হয়। সেই হিসেবে গত আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। গত মাসে বিমানের টিকিট, গাড়ি বিমা, বিভিন্ন ধরনের ভাড়া ও আবাসনের অন্যান্য খরচ বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান নিয়ে খুব বেশি খুশি না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ফিচ রেটিংসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান কুলটন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয় যে আগামী সপ্তাহের বৈঠকে ফেডকে নীতি সুদ হ্রাসের সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত আসতে হবে। কিন্তু সেবা খাতের মূল্যস্ফীতি যেভাবে উচ্চপর্যায়ে আছে, তাতে ফেডারেল রিজার্ভের উচিত হবে, আগামী বছর অতটা আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার না কমানো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে জ্বালানির দাম অনেকটা বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতির সূচকও তখন থেকে মাথাচাড়া দিতে শুরু করে। ফলে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ফেডারেল রিজার্ভ ২০২২ সাল থেকে আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে। সেই লড়াইয়ের এখন তারা জয়ী হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে ২০২১ সাল থেকেই। মহামারির কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া এবং সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার জেরে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তা দ্রুত হারে বাড়তে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার এখন দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের জুলাই থেকে নীতি সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে নীতি সুদহার কমানো হবে, এমন ধারণা বাজারে ছড়িয়ে পড়লেও প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ায় ফেড এখনো সুদহার কমানোর পথে হাঁটেনি। এখন মূল্যস্ফীতি কমে আসায় তারা সুদের হার কমাতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রর নীতি সুদের ওপর বিশ্ব অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি পায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা আর টালমাটাল সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করে সুদ আয় করার দিকে বেশি নজর দেন। বন্ডে বিনিয়োগ বেড়ে গেলে বিশ্বজুড়ে হার্ড কারেন্সি হিসেবে ডলারের সংকট তৈরি হয়। ফলে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ে; দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হয়।