ভারতে সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের পরামর্শ, চলছে তর্কবিতর্ক
মনোভাব বদলে যাচ্ছে মানুষের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের। তাদের কাছে এখন অফিসই একমাত্র ধ্যানজ্ঞান নয়। পশ্চিমা দেশের তরুণেরা এখন কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজছেন। অনেকে ব্যক্তিগত জীবনকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
কিন্তু ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের এখনো দীর্ঘ সময় কাজ করার রীতি আছে। এমনকি শিল্পপতিরা কর্মীদের আরও বেশি করে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। সম্প্রতি সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করা উচিত বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন এলঅ্যান্ডটির চেয়ারম্যান এস এন সুব্রহ্মণ্যন। এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। খবর হিন্দুস্তান টাইমস ও ইকোনমিক টাইমস।
সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করা উচিত, তা নিয়ে চলা বিতর্কে অংশ নিয়েছেন ‘এডেলওয়াইজ়’ মিউচুয়াল ফান্ডের সিইও বা প্রধান নির্বাহী রাধিকা গুপ্ত। কর্মজীবনের শুরুর দিকের ‘ভয়াবহ’ অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেছেন তিনি। এলঅ্যান্ডটির চেয়ারম্যান এস এন সুব্রহ্মণ্যনের উল্টো কথা বলেছেন তিনি।
গত শনিবার এক্স হ্যান্ডলে ‘পছন্দ, কঠোর পরিশ্রম ও সুখ’ শীর্ষক একটি পোস্ট করেন রাধিকা। সেখানে তিনি বলেন, ‘চাকরিজীবনের শুরুতে প্রথম প্রকল্পে চার মাস কাজ করেছিলাম। তখন সপ্তাহে এক দিন ছুটিসহ ১০০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছে, অর্থাৎ দিনে প্রায় ১৮ ঘণ্টা। ফলে তখন দিনের ৯০ শতাংশ সময়েই দুঃখে ভারাক্রান্ত থাকতাম।’
পোস্টের পরবর্তী অংশে নিজের কর্মজীবনের আরও কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন রাধিকা। তাঁর দাবি, জীবনের প্রথম প্রকল্পে কাজ করার সময় সময় অফিসের বাথরুমে প্রায়ই কাঁদতেন তিনি। তখন বেলা দুইটার আগে খেতে পারতেন না, শুধু চকোলেট–কেক খেয়ে তাঁর দিন কাটত। ফলে দুবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাঁকে। তিনি আরও বলেন, ‘তখন সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টা কাজ করতাম এটা সত্যি, কিন্তু উৎপাদনশীলতা ছিল না।’
এরপর এই অদক্ষ কর্মসংস্কৃতির কড়া সমালোচনা করেন ‘এডেলওয়াইজ়’ মিউচুয়াল ফান্ডের সিইও। তিনি বলেন, অনেক উন্নত দেশে ৮ থেকে ৪ ঘণ্টা কাজ করার রীতি আছে, কিন্তু তাদের সেই সময় খুবই উৎপাদনশীল। কাজের জায়গায় কর্মীরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারছেন কি না, তা-ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
এর জন্য প্রযুক্তি, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই) ব্যবহারের দিকে বেশি করে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাধিকা।
এস এন সুব্রহ্মণ্যন কর্মীদের রোববারও অফিস করার পরামর্শ দিয়েছেন। এরপরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। তাঁর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন শিল্পপতি হর্ষ গোয়েঙ্কা থেকে শুরু করে অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন প্রমুখ।
কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন, কত ঘণ্টা কাজ করা হচ্ছে তা নিয়ে নয়—সম্প্রতি ভারতের ফাস্টপোর্স্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন মহিন্দ্রা গোষ্ঠীর কর্ণধার আনন্দ মহিন্দ্রা। শুধু তা-ই নয়, তিনি যে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করেন, তা-ও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন।
এস এন সুব্রহ্মণ্যন বলেছিলেন, সবকিছু তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকলে তিনি রোববারও কর্মীদের কাজ করতে বলতেন। তিনি নিজে রোববার কাজ করেন। এরপর তাঁর প্রশ্ন, মানুষ এত সময় বাড়িতে কী করবে? একজন স্বামী কতক্ষণ স্ত্রীর মুখ দেখবেন? একজন স্ত্রীই–বা কতক্ষণ বাড়ি বসে তাঁর স্বামীর মুখ দেখতে পারবেন? তার চেয়ে ভালো হয় সবাই অফিসে গিয়ে কাজ করলে।
বিশ্লেষকেরা বলেন, বিশেষ কিছু চাকরিতে অতিরিক্ত সময় কাজ করা প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু পাইকারি হারে সব ক্ষেত্রে অধিক সময় কাজ করা বা কাজ করানো অদক্ষতার পরিচায়ক। কর্মীদের উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা গেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব।
এ বাস্তবতায় যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে এখন সপ্তাহে চার দিন কাজের রীতি চালু হয়েছে। অর্থাৎ চার দিনের কর্ম-সপ্তাহ শুরু হয়েছে, বাকি তিন দিন ছুটি। অথচ উন্নয়নশীল দেশের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই এখনো সপ্তাহে ছয় দিন কাজ হচ্ছে।
এর আগে চীনের শিল্পপতি জ্যাক মা দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করার পরামর্শ দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন।